রাজশাহী প্রতিনিধি :
আগামী সংসদ নির্বাচনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই মুহূর্তে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। আমরা বিচার বিভাগকে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জায়গায় টেনে আনতে চাই না। এর নানা ক্ষতিকর দিক আমরা অতীতে দেখেছি। এটা ঐকমত্য কমিশনের বিষয় যেহেতু, গণভোটে গেলেই চূড়ান্ত হবে। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই আমাদেরকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।’
মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী নগরীর পর্যটন মোটেলে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্ব বাছাইয়ের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষর করতে আমরা অপেক্ষা করছি। জুলাই সনদ আদেশ বাস্তবায়ন হতে হবে গণভোটে। গণভোটের মাধ্যমে ড. ইউনূস এই আদেশ স্বাক্ষর করবেন। রাষ্ট্রপতি এই আদেশে স্বাক্ষর করতে পারবেন না। সেটি করলে বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে সেই আদেশ সাংঘর্ষিক হবে।
তিনি বলেন, সংস্কারের বিপক্ষে কেউ দাঁড়ায় বা ইতিহাসে দায়ভার রয়েছে এমন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এনসিপির জোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চলমান রাখতে হবে।
অন্তবর্তী সরকারের কিছু সমালোচনা এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জায়গা থেকেও বলেছি। কিছু উপদেষ্টাদের বিষয়েও কথা এসেছে। এটা যথাযথভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাড্রেস করা উচিত। সরকারের সেই নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা উচিত। এ জন্য নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে উপদেষ্টা পরিষদে কোনো রদবদলের প্রয়োজন হলে সরকার করতে পারে।
এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, শাপলা না দেওয়ার বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের একটা স্বেচ্ছাচারিতা। কারণ, নির্বাচন কমিশন যদি কোনো ধরনের ব্যাখা ছাড়া একটা বিষয় চাপিয়ে দিতে চায়, আমরা ধরে নেব নির্বাচন কমিশন অন্য কোনো শক্তির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়, ন্যায় বিচার করতে সক্ষম নয়। নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না, গায়ের জোরে পরিচালিত হচ্ছে। তখন জনগণের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হবে। যদি আমাদের সাংবিধানিক ব্যাখা দেওয়া হয়, আমরা অন্য যে কোনো প্রতীক নিতে প্রস্তুত আছি।
এনসিপি যাতে নির্বাচনমুখী কার্যক্রম করতে না পারে, সেই উদ্দেশ্য থেকেই শাপলা প্রতীক নিয়ে গড়িমশি করা হচ্ছে অভিযোগ করে নাহিদ বলেন, নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে কোনো রাজনৈতিক শক্তি এটা করছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের অভিযোগ নতুন নয়। আমরা কিন্তু কমিশন গঠনের শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলাম, এই গঠনটা কোন আইনের ভিত্তিতে হলো?
তিনি বলেন, যারা ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচন করেছে, নির্বাচন কমিশন কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা যখন বলেছি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন, তারা বলেছে- আমরা তাদেরকে তওবা পড়িয়েছি এবং কিছু রদবদল করেছি। ফলে ওই একই লোকদের নিয়ে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে, সে প্রশ্ন আমরা বার বার করেছি। আমরা দেখেছি, ওই সময়ের ডিসি কিংবা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু তৃণমূলে যারা কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নাহিদ বলেন, এখন প্রতীক ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে আমাদের নির্বাচন করতে দেবে না, তখন এটাকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের নির্বাচন কার্যক্রম থামিয়ে রাখিনি। আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রার্থী বাছাই চলছে। খুব শিগগিরই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করব।
ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচনের দাবি করে তিনি বলেন, এ জন্য সকল পক্ষকেই কাজ করতে হবে। পতিত শক্তি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। যদি ক্ষমতার লোভে কোনো দল কিংবা কোনো শক্তি যদি মনে করে তারা এককভাবেই সবকিছু করবে বা এই জাতীয় ঐক্য ভেঙে দেবে বা জনগণের আকাঙ্খার বিপরীতে দাঁড়াবে, তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে। তারা সংসদে টিকতে পারবে না। সংসদ টেকাতে তাদের কষ্ট হবে এবং জনগণের আস্থা তারা পাবে না। তাই সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান, সংস্কারের পক্ষে থাকার।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা উচ্চকক্ষে পিআর চাই। এটা একটা মীমাংসিত বিষয় ছিল। পিআর ছাড়া উচ্চকক্ষের তো কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই। নিম্নকক্ষে পিআর নিয়ে আন্দোলনের কোনো প্রয়োজন ছিল না।
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক শক্তি নয়। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে বিচারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে ট্রাইব্যুনালে। আওয়ামী লীগ কোনোদিনই নির্বাচনে বিশ্বাস করেনি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। শেখ মুজিবের আমল থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত তারা বার বার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক কোনো দল নয়। তারা চেষ্টাই করবে নির্বাচনকে ভণ্ডুল করতে। নির্বাচন যাতে না হয়, বাংলাদেশে যেন স্থিতিশীলতা না হয়।
জাতীয় পার্টির বিচার দাবি করে নাহিদ বলেন, জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে। জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যে বলছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া নাকি নির্বাচন হবে না। এই সাহস তারা কীভাবে পায়? সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের সকল গুম-খুনকে বৈধতা দিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমরা মনে করি না তারা গণতন্ত্রের পক্ষের কোনো দল। তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত এবং এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব।
এর আগে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগ ও ভারতের আধিপত্যবিরোধী রাজনীতিতে জামায়াত ও বিএনপি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবে না। চাঁদাবাজি বন্ধের ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দিতে পারবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এনসিপি শক্তিশালী দল হিসেবে অংশ নিতে চায়। সংসদে থাকতে চায়।
এ সময় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসিফ নেহাল, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন, রাজশাহী মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী উপস্থিত ছিলেন।

















