প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এলজিইডিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ফিরে এসেছে। পাল্টে গেছে ১৫ বছরের চিরচেনা রূপ। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশ নেয়া একজন দক্ষ কর্মকর্তার অভিজ্ঞতায় এ প্রতিষ্ঠানটি অনন্য এক উচ্চতায় যাত্রা শুরু করেছে। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এলজিইডির কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে খেলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারভিত্তিক কথপোকথন তুলে ধরেছেন আলমগীর হোসেন
অপরাধচিত্র : এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দয়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কিভাবে সাজিয়েছেন আপনার পরিকল্পনা?
আব্দুর রশীদ মিয়া : এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী অবসরে যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিতে ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছিল। স্থবির হয়ে গিয়েছিল স্বাভাবিক কাজ-কর্মের গতি। শূন্যাবস্থা কাটিয়ে কাজকর্ম স্বাভাবিক করার প্রয়োজনে স্থানীয় সরকার বিভাগে আমার নাম প্রস্তাব করা হয়। আমি কর্মজীবন শুরু করি জাপানের বহুজাতিক কোম্পানি মিতসুবিসিতে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। পরবর্তীতে ’৮৯-এ বাংলাদেশ কর্মকমিশন (পিএসসি)-এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো (এলজিইবি)-তে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করি। ২০০৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে এলজিইডি কুষ্টিয়া জেলায় যোগাদান করি। ২০০৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে, পরে সিরাজগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেছি।
২০০৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। পরে সিরাজগঞ্জ জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবেও কর্মরত ছিলাম। এছাড়া এলজিইডিতে সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি।
ঢাকায় পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য প্রথম আবাসন প্রকল্প ‘ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীনিবাস নির্মাণ শীর্ষক’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছি।
চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাকে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থেকে (মানবসম্পদ উন্নয়ন, মাননিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ) এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
আমার চাকরিজীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় চেষ্টা করছি অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পাদন করতে। এরই মধ্যে কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি যা বাস্তবায়িত হলে ফলাফল শুভ হবে বলেই আমি মনে করি।
অপরাধচিত্র : দায়িত্ব নেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে কী ধরনের পরিবর্তন ও অগ্রগতি এসেছে?
আব্দুর রশীদ মিয়া : দায়িত্বভার গ্রহণ করা পর নেয়ার পর এলজিইডির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দিয়েছি। স্ভবিরতা কাটিয়ে সকল কাজেই গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এলজিইডির সকলেই নিরলসভাবে কাজ করছেন। আমি এলজিইডিতে যোগদানের পর বিভিন্ন কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করছি, কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করে বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি। এতেকরে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজের অনুকূল আবহ তৈরি হয়েছে।
অপরাধচিত্র : পূর্বে যেসব প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বের সেখানকার কাজের অভিজ্ঞতা কি এখানে আপনার কাজে সহায়ক হচ্ছে?
আব্দুর রশীদ মিয়া : এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগেও এখানেই ছিলাম। এখানকার কাজের ধরন, পরিবেশ আমার জানা আছে। যোগদানের পর কর্মকাণ্ডের মধ্যে মূলত উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার এবং সচিবের পরামর্শে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সাথে আস্থাবৃদ্ধিতে সফলতার সাথে কাজ করেছি। বিগত সময়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন)-এ দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালন করি। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে মানবসম্পদ, পরিবেশ ও জেন্ডার ইউনিটেও কর্মরত ছিলাম। এই সকল কাজের মধ্যদিয়ে আমি এ এলজিইডির সাথেই সম্পৃক্ত ছিলাম বলে আমি এখন যে দায়িত্বে আছি তা সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারছি।
অপরাধচিত্র : এ সময় আপনার উল্লেখযোগ্য কাজগুলো কী কী?
আব্দুর রশীদ মিয়া : মানব সম্পদ বিভাগে দায়িত্বপালনকালে প্রতিষ্ঠানের জনবল ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন এবং কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে জনবল নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ প্রদান, কর্মীর দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং একটি স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরি। এছাড়াও, মানব সম্পদ বিভাগ কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দেখাশোনা করা এবং তাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত উন্নয়ন সহায়তা করেছি। গ্রামীণ ও শহর অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে কাজ করি। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মানবসম্পদ উন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ ইউনিট) হিসেবে আমি প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (পিইডিপি-৪) এর দায়িত্ব পালন করেছি। মানব সম্পদ বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে জনবল ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি এবং একটি স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরিতে কাজ করেছি। নারীর ক্ষমতায়নেও ব্যাপক ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছি।
অপরাধচিত্র : এলজিইডি কোন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে ?
আব্দুর রশীদ মিয়া : আমরা স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এলজিইডি কাজ করে থাকে। এলজিইডি একটি বিকেন্দ্রীকৃত সংস্থা, যার মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম বেশি। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন করে থাকে। এলজিইডি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
অপরাধচিত্র : এলজিইডির ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন?
আব্দুর রশীদ মিয়া : এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বৃহৎ স্বার্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন, দক্ষ মানব সম্পদ গঠনে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চেষ্টা করবো। এলজিইডি একটি বিকেন্দ্রীকৃত সংস্থা, যার মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম বেশি। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন করে থাকে।
উল্লেখ্য যে, এলজিইডি: এলজিইডি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করছে। আব্দুর রশীদ মিয়া এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব গ্রহণের পর কিছু উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড হলো:
# কার্যক্রম তদারকি: এলজিইডির দৈনন্দিন কার্যক্রম, বিশেষ করে গ্রামীণ ও নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়মিতভাবে তদারকি করছেন।
# কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক: মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত সভা করে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
# উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন: গ্রামীণ রাস্তা, সেতু, কালভার্ট এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ তদারকি করছেন এবং এগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন।
সংক্ষেপে, এলজিইডির মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান কাজগুলি হল:
* প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন: কর্মীদের দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা এবং তাদের পেশাগত উন্নয়নে সহায়তা করা।
* কর্মপরিবেশ উন্নয়ন: একটি স্বাস্থ্যকর ও উৎপাদনশীল কর্মপরিবেশ তৈরি করা, যেখানে কর্মীরা নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে।
* কর্মীর সুযোগ-সুবিধা দেখাশোনা: কর্মীদের বেতন, ভাতা, ছুটি, এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
* কর্মীর কর্মজীবন উন্নয়ন: কর্মীদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়তা করা, যাতে তারা তাদের কর্মজীবনে আরও ভালো করতে পারে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রশাসনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) হিসেবে আব্দুর রশীদ মিয়া দায়িত্বপালকালে গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এলজিইডি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারিগরি সহায়তা প্রদান এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সহায়তায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এলজিইডি’র প্রশাসনের প্রধান কাজগুলো হল:
* জনবল ব্যবস্থাপনা: জনবল নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং কর্মীদের কর্মজীবন ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত কাজ করা।
* পরিকল্পনা ও ডিজাইন: এলজিইডি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করে এবং ডিজাইন করে। এর মধ্যে রাস্তা, সেতু, কালভার্ট, ডধঃবৎ জবংড়ঁৎপব গধহধমবসবহঃ, এবং অন্যান্য অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত।
* বাস্তবায়ন: এলজিইডি পরিকল্পনা করা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে। এই কাজে দরপত্র আহবান, ঠিকাদার নিয়োগ, এবং কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা অন্তর্ভুক্ত।
* রক্ষণাবেক্ষণ: নির্মিত অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এলজিইডি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মেরামত, সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজ করে।
* কারিগরি সহায়তা: এলজিইডি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা প্রদান করে। যেমন, প্রকৌশল বিষয়ক পরামর্শ, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত।
* মনিটরিং ও মূল্যায়ন: এলজিইডি তাদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পর্যবেক্ষণ করে এবং কাজের গুণগত মান মূল্যায়ন করে।
* মানব সম্পদ উন্নয়ন: এলজিইডি তাদের নিজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
এলজিইডি গ্রামীণ অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে, গ্রামীণ রাস্তা, বাজার, এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করা। সে সবে তার কর্মদক্ষতা নানান ভাবে প্রশংসিত হয়। নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন।