ডেস্ক রিপোর্ট :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জনগণকে সহায়তা দিতে আগ্রহী জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) জেনেভায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এ কথা জানান।
মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত ও সমন্বয়সাধন করতে চায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। একই সঙ্গে মানবাধিকারকে এগিয়ে নিতে এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকার ও জনগণকে সমর্থন করার জন্য উন্মুখ কমিশন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী-জনতা আন্দোলনে ঘটা সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করতে গত ২২ তারিখ মানবাধিকার হাইকমিশন কার্যালয়ের একটি টিম ঢাকায় এসেছিল। মানবাধিকার হাইকমিশনের এশিয়া-প্যাসিফিক শাখা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রধান ররি মঙ্গোভেন ছিলেন এই টিমের নেতৃত্বে।
দলটির বাংলাদেশে বৈঠকের কথা জানিয়ে রাভিনা শামদাসানি বলেন, গত সপ্তাহে কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে, যাদের মধ্যে অনেকেই আটক বা আহত হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকমী, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সঙ্গেও তাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে দলটি অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছে। আমাদের কার্যালয় টেকসই সহায়তা প্রদান করতে পারে, এমন বিষয়ে কথা হয়েছে।
এদিন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের শীর্ষ নির্বাহী ভলকার তুর্ককে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে সহিংসতার যত ঘটনা ঘটেছে, সেসবের আনুষ্ঠানিক তদন্তের অনুরোধও করেছেন তিনি। ভলকার তুর্ক এই আমন্ত্রণকে স্বাগত জানিয়েছেন। বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে নিশ্চিয়তা না দিলেও আনুষ্ঠানিক তদন্তের ইস্যুতে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে রাভিনা শামদাসানি জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন অনুসন্ধান মিশন পরিচালনা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তিনি বলেন, বিক্ষোভের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিবেদন, মূল কারণ বিশ্লেষণ এবং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা এবং দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের জন্য সুপারিশ করার লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশে একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দল পাঠাবে কমিশন। দলটি এ কাজে পূর্ণ সহযোগিতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।
কাউকে গুম হওয়া থেকে থেকে রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশের যোগদানের ঘোষণা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ করার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে মানবাধিকার কমিশন।
মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, গুম নিয়ে বাংলাদেশে একটি দীর্ঘ এবং বেদনাদায়ক ইতিহাস রয়েছে। আমরা সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত আছি। এই কাজগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত।