দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচিতে (সিপিপি) শতাধিক পদের নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া যায়। প্রতিবেদন নিয়ে প্রায় এক বছর গড়িমসি করে শেষ পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে মন্ত্রণালয়। তবে তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ মিললেও দায়ীদের বিরুদ্ধে এখনও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। আর এ সুযোগে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন নিয়োগ বাণিজ্যের মূলহোতা এই কর্মসূচির পরিচালক আহমাদুল হক। ১১তম (বিসিএস) ব্যাচের কর্মকর্তা হয়েও শুধুমাত্র দুর্নীতি-অনিয়মের কারণেই প্রমোশন হয়নি আহমাদুল হকের। প্রমোশন নিয়ে তার মনে কোনো ক্ষোভও নেই। একই পদে দীর্ঘদিন থাকার ফলে ফুলেফেঁপে উঠেছে আহমাদুল হকের ব্যাংক হিসাব। নামে-বেনামে গড়েছেন অঢেল সম্পদ।
এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাচিত, যোগ্য প্রার্থীর নম্বর কমিয়ে দেওয়া, উত্তরপত্র বদল, পছন্দের প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। লিখিত পরীক্ষার খাতায় নম্বর কাটাকাটিরও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০২০ সালের ১৬ জুন ১০৮ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিপিপি। ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট লিখিত পরীক্ষার পর ৩০ আগস্ট ফল প্রকাশ হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষে ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশ হয় চূড়ান্ত ফল। এতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ সেপ্টেম্বর ফল স্থগিত করা হয়। এর পর অক্টোবরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব শেখ মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে তদন্তের দায়িত্ব দেয় মন্ত্রণালয়। ১৩ মাস আগে কমিটির পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিবের কাছে জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদন জমা হওয়ার অন্তত এক বছর পর এই জানুয়ারিতে নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে মন্ত্রণালয়। তবে নিয়োগের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত সবাই আড়ালেই থেকে যায়।
দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা যেখানে ছিলেন সেখানেই অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন রাখঢাক না রেখেই। বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় এস্টেট অফিসার থাকাকালেও তিনি জড়িয়েছেন দুর্নীতিতে। এই মন্ত্রণালয়ে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। জানা যায়, ম্যানেজ মাস্টার আহমাদুল হক তার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভাগীয় মামলাটি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন। দুর্নীতি ও বিভাগীয় মামলা থাকার পরও তদ্বিরবাজ আহমাদুল হক বোল পাল্টে বিএনপি’র মতাদর্শি সেজে ডেপুটি সেক্রেটারি থেকে জয়েন্ট সেক্রেটারি হয়েছেন।
মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সিপিপির নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে বেশ কয়েকজন জড়িত। এর মধ্যে বড় ভূমিকা রাখেন সিপিপির প্রধান কর্মকর্তা আহমাদুল হক। ওই সময় তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেও ‘বিশেষ কারণে’ ব্যবস্থা নেননি সাবেক সচিব মো. মোহসীন। ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তিতেও নিয়োগ কার্যক্রম অনিয়ম প্রমাণিত হলেও বহাল তবিয়তে টিকে আছেন আহমাদুল হক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আহমাদুল হক মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের বিপরীতে অবস্থিত আনোয়ার ল্যান্ডমার্কে ৩টি, বসুন্ধরাতে একাধিক প্লট এবং ফ্ল্যাট, ১২১৮/১ পূর্ব শ্যাওরাপাড়ায় ৪টি ফ্ল্যাট ও পিংক সিটিতে ডুপলেক্স বাড়িসহ বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। দীর্ঘদিন একই পদে একই জায়গায় থাকার ফলে অবৈধ আয়ের পথ ও দুর্নীতির পথ প্রশস্ত করতে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে ত্রাণ সচিব ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার সাথে বিশেষ সখ্য আছে বলে প্রচার করছেন।
অভিযোগ সম্পর্কে আহমাদুল হক বলেন, কোন নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও এটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে, নিমানুযায়ি মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।