নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক সমঝোতার পর শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশ নির্ধারণের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। গত কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যায় শনিবার (২ জুলাই) সকালেই। ব্যবসায়ী, সরকার ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সবপক্ষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আশাবাদ বেড়েছে। এ কারণে গত কয়েকদিনের তুলনায় পুঁজিবাজারে রোববার (৩ জুলাই) বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে এবং বেশিরভাগ কোম্পানির দরবৃদ্ধি দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। দিনশেষে সাড়ে ১১ মাস পর প্রধান পুঁজিবাজারে সার্বিক লেনদেন ১১শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ১৫ শতাংশ কমাতে পারা একটি বড় সাফল্য। এতে পোশাক খাতের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার সরকারের দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এ কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে। এসবের ফলেই এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, দিন যত যাচ্ছে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কেটে যাচ্ছে। কারণ সরকারের দায়িত্বশীলরা বার বার বলছেন নির্বাচনের জন্য যে সময়ের কথা বলা হয়েছে, সেই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আবার আলোচনার মাধ্যমে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমাতেও সক্ষম হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। তাছাড়া ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজার টাকার একটি অংশ সেখানে চলে যায়। এখন সুদের হার কমায় সেই টাকা বাজারে ফিরতে শুরু করেছে। এ কারণে পুঁজিবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সঙ্গে লেনদেনের গতিও বাড়ছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে সমঝোতা হওয়ায় পুঁজিবাজারের কালো মেঘ সরে যায়। যার প্রেভাবে রোববার সকালে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় প্রায় ৩৪ পয়েন্টের বৃদ্ধি দিয়ে।
এক পর্যায়ে সার্বিক সূচকটি ১শ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে দিনশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৫৩৬ পয়েন্টে। যা বৃহস্পতিবার ৯১ পয়েন্ট ও বুধবার ৫৪ পয়েন্ট বেড়েছিল। অর্থাৎ শেষ ৩ কার্যদিবসে সূচকটি বেড়েছে ২৩৮ পয়েন্ট।
এদিন (রোববার) ডিএসই-তে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ১৪ আগস্ট আজকের থেকে বেশি বা সর্বশেষ ১১ শত কোটি টাকার উপরে লেনদেন হয়েছিল। এ হিসেবে বিগত সাড়ে ১১ মাসের মধ্যে আজ সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। ডিএসই-তে লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২১৮ টি বা ৫৪.৭৭ শতাংশের। আর দর কমেছে ১২২টি বা ৩০.৬৫ শতাংশের ও দর পরিবর্তন হয়নি ৫৮টি বা ১৪.৫৭ শতাংশের।
অপরদিকে সিএসই-তে রবিবার ২০ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এদিন সিএসই-তে লেনদেন হওয়া ২৩৬ টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৫৩টির, কমেছে ৬০টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২৩টির। এদিন সিএসই’র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৮২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৪৮৪ পয়েন্টে।
এর আগে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে (বৃহস্পতিবার) সিএসই-তে ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল। আর সূচক সিএএসপিআই বেড়েছিল ২৮২ পয়েন্ট।