স্পোর্টস ডেস্ক :
সেন্ট ভিনসেন্টে আজ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টির পর উৎসবের আমেজ বাংলাদেশ দলে। কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ। লিটন দাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এই সাফল্য পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে। এমনটা রীতিমতো তাক লাগানো ব্যাপার।
নাজমুল হোসেন শান্ত খেলতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের একটি ম্যাচও। নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে উইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন লিটন। ভারপ্রাপ্ত হলেও লিটনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেতৃত্ব একেবারে প্রথম নয়। তাইতো উইন্ডিজকে তাদের মাঠে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করার পর লিটনের কাছে প্রশ্ন, স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করতে এবার তিনি প্রস্তুত কি না। সেন্ট ভিনসেন্টে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি শেষে সংবাদ সম্মেলনে লিটন বলেন, ‘বিসিবি যদি অধিনায়কত্ব দেয়, আমি অবশ্যই করতে রাজি। অধিনায়কত্ব আমি উপভোগ করছি। বোলাররা ভালো করলে অধিনায়কত্ব সহজ হয়ে যায়। ফিল্ডিং সেটআপ থেকে শুরু করে অনেক কিছুই বোলাররা নিজেরাই করে নেয়, যা আমার জন্য কাজটা সহজ করে দিয়েছে।’
সিরিজ জয়ের পর সংবাদমাধ্যমে লিটন বলেন, ‘টেস্ট সিরিজ শুরু করার সময় আমাদের দলে কয়েকজন নিয়মিত টেস্ট খেলা ক্রিকেটার ছিল। তবুও আমরা ভালো টেস্ট ক্রিকেট খেলেছি। পরে ওয়ানডে ফরম্যাটেও ভালো ক্রিকেট খেলেছি, যদিও দুর্ভাগ্যবশত জিততে পারিনি। আসলে আমরা খারাপ খেলিনি। ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স করলেও জয়টা আসেনি। তবে দলের ভেতর একটা বিশ্বাস সবসময় ছিল।’
বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে বেড়ানো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সিদ্ধহস্ত। উইন্ডিজকে তাদের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই তো অনেক দূরে থাক, সিরিজ জেতাই অনেক কঠিন। এমন অসাধ্য সাধন লিটনরা কীভাবে করলেন, সেটাই অনেকের কাছে অবাক করা ব্যাপার। সংবাদ সম্মেলনে লিটন বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আমাদের চেয়ে সেরা হতে পারে এবং তারা যেকোনো দিন যেকোনো দলকে হারানোর সামর্থ্য রাখে। নিজেদের মাঠে তারা খুব শক্তিশালী। আমার বার্তা ছিল—ক্রিকেটটা উপভোগ করো, নিজের দায়িত্ব পালন করো, আর ফল যা-ই হোক, হাসিমুখে মেনে নাও।’
সেন্ট ভিনসেন্টে সিরিজের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে ১৪৭ ও ১২৯ রান করেছে বাংলাদেশ। শেষ টি-টোয়েন্টিতে আজ তারা ছাড়িয়ে গেছে প্রথম দুই ম্যাচকে। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ করেছে ১৮৯ রান। প্রতি ম্যাচের স্কোরে এমন পার্থক্য হওয়ার ব্যাপারে লিটন বলেন, ‘কিছু ম্যাচ দেখে অনেকেই মনে করতে পারেন আমরা ব্যাটিংয়ে কষ্ট করছি। কিন্তু সত্যটা হলো, উইকেটগুলো ব্যাটিংয়ের জন্য খুব একটা সহায়ক ছিল না। তবে আজকের উইকেট ব্যাটিংবান্ধব হওয়ায় ব্যাটাররা ভালো করেছে। আমাদের বোলিং আক্রমণ এই সংস্করণে অসাধারণ। পেসার-স্পিনাররা দারুণ বোলিং করেছে, উইকেটের পেছনে যেটা দাঁড়িয়ে থেকে আমি মুগ্ধ করেছে। এমন উইকেটে ব্যাটিং করা প্রতিপক্ষের জন্য সত্যিই কঠিন ছিল।’
টি-টোয়েন্টিতে সিরিজে বাংলাদেশের বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। সিরিজে সর্বোচ্চ ৮ উইকেট নিয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান। যখনই প্রয়োজন, মেহেদী, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদরা ব্রেকথ্রু দিয়েছেন। বোলারদের প্রশংসা করে লিটন বলেন, ‘তারা শক্ত প্রতিপক্ষ এবং নিজেদের মাঠে তারা অসাধারণ ক্রিকেট খেলে। আমাদের দলে ভারসাম্যপূর্ণ ব্যাটিং লাইনআপ রয়েছে। যদিও বিধ্বংসী ব্যাটিং আক্রমণ বলব না। আমাদের বোলাররা দারুণ দায়িত্বশীল বোলিং করেছে। ফিল্ডিং সেটআপ থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজ বোলাররা নিজেরাই করেছে। এমন দায়িত্বশীলতা দলের উন্নতির ইতিবাচক দিক।’
অধিনায়কত্বে পাস মার্ক পেলেও ব্যাটার হিসেবে ধুঁকছেন লিটন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে আজ তৃতীয় ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন তিনি। ১৩ বলে করেন ১৪ রান। সব মিলে টি-টোয়েন্টি সিরিজে করেন ১৫ রান। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘ব্যাটিং নিয়ে আমি কাজ করছি। সালাউদ্দিন স্যারের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছি। স্যার সবার সঙ্গে খুবই উন্মুক্ত আলোচনা করেন এবং ছোটবেলা থেকে আমাদের চিনেন। স্যারের সঙ্গে কাজ করে আমার বিশ্বাস, খুব দ্রুতই ফর্মে ফিরে আসতে পারব।’