নিজস্ব প্রতিবেদক :
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে রুটিন দায়িত্বে কর্মরত সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল) এর ঘনিষ্ঠ মো.জালাল উদ্দিন চৌধুরীর চুক্তিভিত্তক নিয়োগের গুঞ্জন উঠেছে। সিনিয়র কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে একজন জুনিয়র কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তক নিয়োগ নিয়ে শিক্ষা ভবনের মতো এই কার্যালয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর দেশে পরিবর্তিত সময়ে ইইডির সিনিয়র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রায়হান বাদশাকে প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সৈয়দপুরের বিহারি এবং ছাত্রজীবনের শিবিরের নেতা তকমা লাগিয়ে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর রুটিন দায়িত্বে থাকা রায়হান বাদশাকে তকমা লাগিয়ে এসডি করা হয়। এসময় তার সাথে আরো দুজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়। নিজে নওফেলের ঘনিষ্ঠ হলেও যোগ্য এবং সিনিয়র কর্মকর্তাদের সরিয়ে এ পদে নিয়োগ পান ৫ ধাপ নীচের একজন জুনিয়র কর্মকর্তা। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর রুটিন দায়িত্বে নিয়োগ পান গত নভেম্বর মাসে। আগামী রোববার অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার জন্য উপদেষ্টা ও সচিবের দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর রুটিন দায়িত্বে থাকা রায়হান বাদশাকে কি কারণে এসডি করা হয়েছে তা আমার জানা নেই।
আর্থিক ক্ষমতা মাঠপর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ করায় নিজেদের অপকর্মের পথ রুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কায় কিছু প্রকৌশলী অধিদফতরের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস এ লিপ্ত আছে। বর্তমানে রুটিন দায়িত্বে থাকা মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সে গুলো তদন্ত না করে তাকে দায়িত্ব দেয়া ঠিক হয়নি। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ খালি থাকলেও তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, এ দফতরে এখন প্রয়োজন একটি শুদ্ধি অভিযান। জুনিয়র একজন কর্মকর্তাকে রুটিন দায়িত্ব দেয়ায় এই কার্যালয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তােষ ছড়িয়ে পড়েছে। কারন অতীতে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের সময় এ ধরনের কর্মকাণ্ডে চরম বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, জেলা পর্যায়ে সহকারী প্রকৌশলী এবং উপজেলা পর্যায়ে উপসহকারী প্রকৌশলীদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন কাজগুলো বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। মূলত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় যাবতীয় শিক্ষা অবকাঠামো নির্মাণের জন্য একটি পরিপূর্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। আর এই বিভাগের মাধ্যমেই মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর নানা ধরনের কাজ সম্পাদন হয়ে থাকে। শিক্ষা প্রকৌশলের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ দিন প্রধান প্রকৌশলীর একক ক্ষমতার কাছে জিম্মি ছিল। অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট যেমন গণপূর্ত অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী/তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের আর্থিক ক্ষমতা থাকলেও ইইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের কোনো আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতে এই সংস্থায় আরো সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য চুক্তিভিত্তক নিয়োগ দেয়া হলে কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে বলে কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর রুটিন দায়িত্বে থাকা মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, আমি আগামী সপ্তাহে অবসরে যাচ্ছি। চুক্তির বিষয় বলতে পারবে না।
এ বিষয়ে সাবেক শিক্ষা প্রকৌশলী মো. রায়হান বাদশা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সৈয়দপুরের বিহারি এবং ছাত্রজীবনের বিশেষ তকমা লাগিয়ে এএসডি করা হয়েছে। কি কারণে আমাকে সরিয়ে দেয়া হলো আমি জানি না। তিনি বলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে যারা সিনিয়র তাদের নিয়মমাফিক পদোন্নতি আমরা সরকারের নিকট প্রত্যাশা করি।