বৃহস্পতিবার , ৬ জুন ২০২৪ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অপরাধচিত্র বিশেষ
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলাধুলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জাতীয়
  9. জেলার খবর
  10. ঢাকা
  11. তথ্য-প্রযুক্তি
  12. প্রবাসের কথা
  13. বরিশাল
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

আসামিদের জবানবন্দি : যে তিন কারণে হত্যা করা হয় এমপি আনারকে

প্রতিবেদক
Newsdesk
জুন ৬, ২০২৪ ২:৩৩ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক :

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামিরা। এদের মধ্যে রয়েছে অভিযুক্ত শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান, শিমুল ভূঁইয়ার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও কলকাতায় জিহাদ হাওলাদার। এমপিকে হত্যার পেছনে তিন কারণ উল্লেখ করেছে তারা।

জবানবন্দি ও ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে আনার হত্যার কারণগুলো।

শিমুল ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী পলাতক আখতারুজ্জামান শাহিন। তার সঙ্গে আনারের হুন্ডি কারবার নিয়ন্ত্রণ ও সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল। এছাড়া শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে চরমপন্থা ও রাজনৈতিক আদর্শগত বিরোধ ছিল। তবে এর আগেও আনারের সঙ্গে শিমুলের রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধ। এই বিরোধের জেরে আনারকে হত্যার জন্য শাহিন ও শিমুল ভূঁইয়া দফায় দফায় বৈঠক করে হত্যার ছক চূড়ান্ত করেন। গত ৩০ এপ্রিল কলকাতায় পৌঁছান আখতারুজ্জামান শাহিন। শাহিনের সঙ্গে কলকাতায় যান বান্ধবী শিলাস্তি রহমান ও শিমুল ভূঁইয়া। সবাই ওঠেন আখতারুজ্জামানের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে। শিলাস্তি নিজে খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার না করলেও ঘটনার দিন তিনি ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন বলে জবানবন্দিতে বলেছেন।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শিমুলের ভাতিজা তানভীর গত ৬ মে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে কলকাতায় যান। সেখানে সল্টলেক ও নিউ টাউনের মাঝামাঝি এলাকায় ত্রিশিব হোটেলে ওঠেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এমপি আনারকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সংসদ সদস্য আনার কলকাতা যান ১২ মে। সেখানে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। পরদিন তাকে প্রলুব্ধ করে নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে নেয়া হয়। তখন ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিলেন শিলাস্তি, শিমুল, তানভীর, সহযোগী জিহাদ হাওলাদার, সিয়াম হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী। খুনের আগেই আখতারুজ্জামান শাহিন ঢাকায় চলে আসেন।

জবানবন্দীতে শিলাস্তি দাবি করেছেন, খুনের আগে কলকাতায় নিউমার্কেট থেকে পলিথিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হয়। তিনি এসব কেনার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। এসব সামগ্রীর মান বাংলাদেশের চেয়ে ভালো, তাই কেনা হচ্ছে বলে তখন তাকে জানানো হয়।

সূত্র জানায়, ওই ফ্ল্যাটেই সংসদ সদস্যকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ টুকরা টুকরা করে গুম করা হয়। তানভীর নিজে বালিশচাপা দেন বলে জবানবন্দিতে বলেন। এ ঘটনায় জিহাদ হাওলাদার কলকাতায় গ্রেপ্তার ও সিয়াম নেপালে আটক আছেন। সিয়ামকে ফেরাতে গত শনিবার ঢাকা থেকে পুলিশের একটি তদন্ত দল নেপালে গিয়ে সোমবার ফিরলেও সিয়ামকে ফেরানোর অগ্রগতি হয়নি।

বুধবার (৫ জুন) দ্বিতীয় দফায় ৫ দিনের রিমান্ড শেষে শিমুল ভূঁইয়াকে আদালতে হাজির করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিএমপির ওয়ারী গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) তোফাজ্জল হোসেন শিমুল ভূঁইয়ার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার ৩ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তার আগে মঙ্গলবার (৪ জুন) আদালতে জবানবন্দি দেন শিমুল ভূঁইয়ার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া। গত সোমবার (৩ জুন) আদালতে জবানবন্দি দেন আরেক আসামি শিলাস্তি রহমান।

আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শিমুল ভুঁইয়া বলেন, এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। কলকাতায় হত্যা মিশন শেষ করে গত ১৫ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তিনি ছিলেন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) একজন শীর্ষ নেতা। খুলনা, ঝিনাইদহ ও যশোরে সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণকারী। এ কাজে বাধা ছিলেন এমপি আনার। এরমধ্যে আখতারুজ্জামান শাহিন খুনের পরিকল্পনা করলে শিমুল রাজি হয় ও যৌথভাবে আনারকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) প্রধান নেতা ছিলেন ডা. মিজানুর রহমান টুটুল। ২০০৮ সালের জুলাইতে তিনি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। টুটুল শিমুল ভূঁইয়ার আপন বোনের স্বামী এবং আখতারুজ্জামান শাহিনের চাচাতো ভাই।

শিমুলে দাবি, সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেয়ার আগে সংসদ সদস্য আনারের সঙ্গে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। যারা ছিলেন টুটুলের বিরোধী পক্ষ। শিমুল ও শাহিনের ধারণা, ওই যোগাযোগের সূত্র ধরেই এমপি আনার টুটুলকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিয়েছে। এজন্যই শাহিন এমপি আনারকে হত্যার দায়িত্ব দিতে শাহিন রাজি হন।

উল্লেখ্য, আনোয়ারুল আজিম আনার ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। পেশায় ব্যবসায়ী আনোয়ারুল আজিম আনার আওয়ামী লীগের কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।

ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

এর আগে গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। সেখানে ১৩ মে তাকে হত্যা করে মরদেহ টুকরো টুকরো করে গুম করা হয়েছে বলে জানায় ডিবি।

সর্বশেষ - জাতীয়