নিজস্ব প্রতিদেক :
বাংলাদেশে বার্ষিক আয়কর ফাঁকির পরিমাণ প্রায় দুই লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে মাথাপিছু স্বাস্থ্য বরাদ্দের চারগুণ বাড়ানো সম্ভব কিংবা কয়েকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। কালো টাকা এবং পুঁজি পাচার ২ শতাংশ বন্ধ করলে আরেকটি পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করা সম্ভব। নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
শনিবার (২৯ জুন) ঢাকার পল্টনস্থ ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে ইক্যুইটিবিডি এবং সমমনা সংগঠন, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, সিএসআরএল, এনডিএফ, সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলন, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা এবং ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ-এর যৌথ আয়োজনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইক্যুইটিবিডির চিফ মডারেটর রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আহসানুল করিম বাবর। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের ইকবাল ফারুক, বাংলাদেশ কৃষক ফাউন্ডেশনের এএসএম বদরুল আলম, শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, এনডিএফের ইবনুল সৈয়দ রানা, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের মিজানুর রহমান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে অসহনীয় দুর্নীতি বন্ধে একটি সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশনের দাবি উত্থাপন করা হয়। মূল বক্তব্যে মো. আহসানুল করিম কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন যার মধ্যে রয়েছে-দুর্নীতি বন্ধে একটি পাবলিক এক্সপেন্ডিচার রিভিউ কমিশন গঠন করতে হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি দুই প্রধান উদ্বেগ পুঁজি পাচার ও কালো টাকা বন্ধে একটি আন্তঃদেশীয় ব্যাংক স্বচ্ছতা চুক্তি চালু করতে হবে, দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী নাগরিকদের প্রতি বছর সম্পদ এবং ব্যাংক বিবরণী জমা দিতে হবে, ঋণদাতা সংস্থার শর্ত হিসেবে জনসেবা খাতে ভর্তুকি হ্রাস করার পরিবর্তে সরকারকে অপ্রয়োজনীয় এবং অযৌক্তিক সরকারি ব্যয় বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন পরিচালনাকালে ইক্যুইটিবিডি’র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সরকার যদি আয়কর ফাঁকি দেয়া বন্ধ করতে পারে, যা বার্ষিক প্রায় দুই লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা বা ২৫ বিলিয়ন ডলার, তাহলে সেই টাকা দিয়ে দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দ্বিগুণ করা যায় বা মাথাপিছু স্বাস্থ্য বরাদ্দ চারগুণ বাড়ানো যেত।
তিনি আরো বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বার্ষিক ভিত্তিতে সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হবে, দুর্নীতি ধরা পড়লে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের এএসএম বদরুল আলম বলেন, যে আইএফএম সম্প্রতি বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয় ডলার ঋণ দিয়েছে, তারা সরকারকে জনস্বার্থে দেয়া বিদ্যুৎ ভর্তুকি বন্ধ করার শর্ত আরোপ করছে। কিন্তু তারা অপ্রয়োজনীয় এবং অযৌক্তিক সরকারি ব্যয় বন্ধ করার পরামর্শ দিচ্ছে না।
শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, জনগণের কল্যাণে বরাদ্দ সরকারের ভর্তুকি কমানো উচিত হবে না। বরং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান বাড়াতে পানি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুতের মতো জীবনরক্ষাকারী সেবায় সরকারের আরো বেশি ভর্তুকি প্রদান করা উচিত।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের এজিএস মিজানুর রহমান বলেন, দুর্নীতি ও কালো টাকা বন্ধে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারাই প্রচুর সম্পদ ও অর্থ নিয়ে দেশ ছেড়েছেন।