নিজস্ব প্রতিবেদক :
বর্ণাঢ্য আয়োজন ছাড়াই সোমবার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘জন্মাষ্টমী’ উদযাপন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। দেশের একটা অংশে ভয়াবহ বন্যার কারণে এবার বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়নি জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রায়। শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিন (জন্মাষ্টমী) উপলক্ষে রাজধানীতে শোভাযাত্রা হয়েছে। বিকেলে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে শুরু হয়ে বাহাদুর শাহ্ পার্কে গিয়ে শেষ হয় শোভাযাত্রাটি। এ সময় পুলিশের পাশাপাশি যাবতীয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অজেয় চার (৪ বীর)। শোভাযাত্রার নিরাপত্তায় ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যরাও। রাজধানীর পলাশীতে জন্মাষ্টমী তিথি উপলক্ষে ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অন্তর্র্বতী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক টুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই জনগোষ্ঠী অনিরাপদ থাকলে পুরো বাংলাদেশ অনিরাপদ থাকবে। তাই নতুন বাংলাদেশ গড়তে সব জনগোষ্ঠীর সমান মর্যাদা নিশ্চিত করতে চাই।’ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তরুণ এই তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘দেশকে এক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে বাইরের দেশের শক্তিকে রুখে দিতে হবে।’ একই অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, বিভেদ সৃষ্টি করে। এসবের বিপরীতে দেশের স্বার্থে সবাইকে এক হতে হবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছর যতবার মন্দিরে হামলা হয়েছে কখনও সেসবের বিচার হয়নি। তবে অন্তর্র্বতী সরকার এমন ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও জানান আসিফ নজরুল।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ধর্মীয় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইলে পালিত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি, তথা শুভ জন্মাষ্টমী। সোমবার বেলা ১১টায় পৌর শহরের বড় কালিবাড়ী প্রাঙ্গণ হতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বড় কালিবাড়ী এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন বড় কালিবাড়ী মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক জীবন কৃষ্ণ চৌধুরী, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুণ ঝন্টুসহ হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও এই শোভাযাত্রায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ অংশ নেন।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে নানা আয়োজনে সোমবার জন্মাষ্টমী পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে কুড়িগ্রাম বাজার কেন্দ্রীয় কালিমন্দির চত্বরে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বাবু উদয় শংকর চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আল আসাদ মো: মাহফুজুল ইসলাম , অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরমান হোসেন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রবি বোস, সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র রায়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এস এম ছানা লাল বকসি প্রমুখ। পরে একটি শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে। অপরদিকে হরিকেষ ইসকন মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।সোমবার দুপুরে জন্মাষ্টমী উদযাপন কমিটির আয়োজনে পৌরশহরের মন্দিরপাড়া এলাকার গোবিন্দ জিউ মন্দির থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে গোবিন্দ জিউ মন্দিরের সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখর কুমার রায়ের সভাপতিত্বে সেখানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান, বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক। এছাড়াও রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সভাপতি বাসুদেব ব্যানার্জি, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি মনোরঞ্জন সিং, সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ কুমার কুন্ডু, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর গুপ্ত বুয়া, জেলা হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন কুমার রায়, জেলা যুব মহাজোটের সভাপতি জয় মহন্ত অলকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষসহ অন্যরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভায় সবাইকে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান তারা। পরে ভক্তদের প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী নগরীর কয়েকটি স্থানে শোভাযাত্রা বের করা হয়। সকালে নগরীর সাহেব বাজারের শ্রীশ্রী গোপীনাথ ও লক্ষ্মীনারায়ণ দেব মন্দির থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। বিভিন্ন মোড় প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি হুনুমানজিউর আখড়ায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে চন্ডিপাঠ ও গীতা, যজ্ঞের মধ্যদিয়ে মূল আনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উত্তরণে সম্মিলিত ভাবে প্রার্থনা করেন ভক্তরা।
সিলেটে প্রতিনিধি জানান, সিলেটে অনাড়ম্বর আয়োজনে পালিত হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব জন্মাষ্টমী। সকালে নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় উৎসব উদ্বোধন করেন সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পূজা উদযাপন পরিষদসহ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ। পরে একটি শোভাযাত্রা নগরের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বন্যার্তদের জন্য সহযোগিতা তোলা হয়।এছাড়াও মন্দির ও উপাসনালয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে শ্রী কৃষ্ণের জন্মতিথি পালন করা হচ্ছে। বন্যার্তদের সহায়তায় এ বছর উৎসবের ব্যয় উৎসর্গ করেছেন সিলেটের বেশির ভাগ আয়োজক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে জন্মাষ্টমী উদযাপিত হয়েছে। সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে হরিনাম সংকীর্তনসহ মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এতে বিভিন্ন বয়সী ভক্তরা অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালিবাড়ি থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবারও আনন্দময়ী কালি বাড়িতে এসে শেষ হয়। এর আগে, ধর্মীয় আলোচনা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও চলমান বন্যায় দুর্গতদের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
নেত্রকোণা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোণায় বন্যার্তদের সাহায্যার্থে উৎসব ব্যয় কমিয়ে জন্মাষ্টমী উদযাপিত হয়েছে নানা আয়োজনে। শহরের নরসিংহ জিউর আখড়াসহ জেলার ১০ উপজেলায় এই আয়োজন করে উদযাপন কমিটি। সকালে জেলা শহরের নরসিংহ জিউর আখড়া মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের পুজার্চনা ও আলোচনা সভার পরে বের হয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবারো মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। কর্মসূচিতে পুজার্চনা, গীতাপাঠ, প্রার্থনা, শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।