বুধবার , ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অপরাধচিত্র বিশেষ
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলাধুলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জাতীয়
  9. জেলার খবর
  10. ঢাকা
  11. তথ্য-প্রযুক্তি
  12. প্রবাসের কথা
  13. বরিশাল
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

জাহাজে সাত খুন: গ্রেফতার আকাশ ৭ দিনের রিমান্ডে

প্রতিবেদক
Newsdesk
ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪ ৯:০৫ অপরাহ্ণ

চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুরে মেঘনায় সারবাহী কার্গো জাহাজ এমভি আল-বাখেরার সাত স্টাফকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় অভিযুক্ত আকাশ মণ্ডলকে চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ফারহান সাদিকের আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নৌপুলিশের পরিদর্শক মো. কালাম খান। পরে আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন এপিপি অ্যাড. শরীফ মাহমুদ সায়েম, এপিপি অ্যাড. মাসুদ প্রধানীয়া, এপিপি অ্যাড. ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম, এপিপি অ্যাড. শাহজাহান খান, আইনজীবী অ্যাড. শামিম হোসেন, অ্যাড. মিল্টন, অ্যাড. তোফায়েল।

এর আগে, আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১-এর সদস্যরা।

এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে হাইমচর থানায় অজ্ঞাত ‘ডাকাত দলের’ বিরুদ্ধে মামলা করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মোর্শেদ। ওই মামলার এজাহারে তিনি এই আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানের নাম উল্লেখ করেন। এতে বলা হয়, আহত জুয়েল জানিয়েছেন, জাহাজে নবম ব্যক্তি হিসেবে ইরফানও ছিল।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে আকাশ মণ্ডল ইরফান জাহাজের মাস্টার (চালক) গোলাম কিবরিয়াসহ সবাইকে হত্যা করে। ইরফান জাহাজের সুকানির সঙ্গে ইঞ্জিনরুমে কাজ করতো।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফানের দেওয়া তথ্যমতে র‍্যাব আরও দাবি করে, জাহাজের বাজার করার জন্য ইরফান পাবনার একটি বাজারে নেমেছিল। সেখান থেকে তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কেনে। আর যে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সেটি আগেই জাহাজেই ছিল। কুড়ালটি জাহাজের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছিল। আগের দিন রাতের খাবার রান্নার সময় ইরফান জাহাজের বাবুর্চির অগোচরে খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। সেই খাবার খেয়ে সবাই অচেতন হয়ে পড়লে হাতে গ্লাভস পরে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মাস্টারসহ সবাইকে হত্যা করে। ঘটনা যাতে জানাজানি না হয় সে জন্য ইরফান মাস্টারসহ সবাইকে হত্যা করে।

সংস্থাটির দাবি, যখন সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করে তখন জাহাজ মাঝনদীতে নোঙর করা ছিল। পরে সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজে জাহাজ চালিয়ে হাইমচর এলাকায় এসে অন্য ট্রলার দিয়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে, নৌপুলিশ বলছে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পেলেও ক্রাইম সিন দেখে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, নিহতদের সবার লাশ নিজ নিজ কক্ষে পাওয়া গেছে। যেন সবাই ঘুমাচ্ছে। সবার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জাহাজে কাউকে আক্রমণ করলে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করবে, চিৎকার করলে অন্যরা রক্ষা করতে আসবে। কিন্তু এখানে তেমন মনে হচ্ছে না। এ অবস্থায় সব দিক মাথায় রেখে কাজ করছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো।

ইতোমধ্যেই জেলা পুলিশ, নৌপুলিশ, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের স্বজন ও নৌযান শ্রমিকদের দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আগামী দুই দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ২০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবি করেছেন নৌযান শ্রমিকরা। তা না হলে সারা দেশে ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে কর্মবিরতির মাধ্যমে নৌপথ বন্ধ রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে জাহাজে গিয়ে লাশগুলো নিজ নিজ শয়নকক্ষে পেয়েছি। শীতের দিনে আমরা যেভাবে লেপ-কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকি, দেখে মনে হচ্ছিল নিহতরাও সেভাবে ঘুমিয়ে আছেন। তাদের প্রত্যেকেরই মাথায় আঘাত।’

তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে আমরা মনে করি, কেউ কাউকে মারতে গেলে বা কেউ যখন নিশ্চিত হয় আমাকে হত্যা করতে আসছে, তখন তিনি জীবন রক্ষায় হাত দিয়ে হোক, পা দিয়ে হোক- যেকোনোভাবেই হোক তিনি নিজেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবেন এবং তাদের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত থাকার কথা। কিন্তু প্রত্যেককে আমরা পেয়েছি শুধু মাথায় আঘাত পাওয়া অবস্থায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি রুমে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটালে চিৎকার বা সাড়াশব্দে পাশের রুমে শব্দ পাওয়ার কথা এবং তারা সবাই একত্রিত হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে সেরকম কিছু মনে হয়নি। আবার ডাকাতরা যেটি করে থাকে- সবাইকে একরুমে নিয়ে এসে তারপর ডাকাতি করে। এখানে সেরকম পাইনি, সাতটি লাশ পেয়েছি সাতটি ভিন্ন ভিন্ন রুমে। সেক্ষেত্রে বলা যায়, তাদের হয়তো চেতনানাশক প্রয়োগ করা হয়েছিল বা কোনও ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল।’

নৌপুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ময়নাতদন্তের পর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা ভিসেরা রিপোর্ট প্রস্তুত করছি। সংশ্লিষ্ট গবেষণাগার থেকে এটির সায়েন্টিফিক রেজাল্ট পেলে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবো, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কী কারণ ছিল।’

ধারণা করে তিনি আরও বলেন, ‘লাশগুলো পর্যবেক্ষণে আমাদের মনে হয়েছে, এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যে বা যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারা সম্ভবত জাহাজটি চট্টগ্রামের যে বন্দর থেকে আসে সেখান থেকে নাবিকদের সঙ্গেই ছিল। এখন পর্যন্ত (২৪ ডিসেম্বর বিকাল) আমাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জাহাজে আট জন নাবিক ছিলেন। এর মধ্যে সাত জন নিহত হয়েছেন এবং একজন গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’

 

সর্বশেষ - জাতীয়