নিজস্ব প্রতিবেদক :
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রম ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে চলমান ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এবং কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ।
আজ বুধবার দুপুরে এ স্মারকলিপি প্রদান করে সংগঠনটি। সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গাজী সেলিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে আজ দুপুরে স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে যমুনা অভিমুখে যাত্রা করা সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।মগবাজার এলাকায় আসলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তারা। পরে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন।
স্মারকলিপি জমা দিতে যাওয়া প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন মো. কবির হোসেন, মো. আখেরুজ্জামান, মো. ইমাম উদ্দীন, মো. জিল্লুর রহমান খান, মো. মমিনুল ইসলাম, মো. আনিসুজ্জামান, মো. তুহিনুজ্জামান তুহিন, মো. সাব্বির আহমেদ, মো. মাশফিকুল ইসলাম দেওয়ান ও মো. জুবায়ের পাটোয়ারী।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যাওয়ার পর মগবাজার এলাকায় অবস্থান নেয়—শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীরা। পরবর্তীতে তারা কাকরাইল মোড়ে এসে অবস্থান নেন। প্রতিনিধি দল ফিরে আসা পর্যন্ত কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এর আগে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে আইডিইবি ভবনের সামনে থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-পেশাজীবীরা প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বাসভবন যমুনায় যাত্রা শুরু করেন। পথে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং ৭ দফা বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে প্রকৌশল কর্মক্ষেত্রকে ডেস্ক ও ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভাগ করে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ১০ম গ্রেডভুক্ত উপসহকারী প্রকৌশলী পদ শুধুমাত্র বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষণ করা; সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রকৌশল সংস্থা, বিভাগ ও বিদ্যুৎ কোম্পানির জনবল কাঠামোতে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের হার ১:৫ করা; সব প্রকৌশল সংস্থায় উপসহকারী প্রকৌশলী হতে সহকারী প্রকৌশলী পদে বিদ্যমান ৩৩ শতাংশ পদোন্নতির বিধান ৫০ শতাংশে উন্নীত করা; মেধার অপচয় রোধে কারিগরি ক্যাডার ব্যতীত অন্য কোনো ক্যাডারে প্রকৌশলীদের নিয়োগ বন্ধ এবং প্রকৌশল পেশা পরিবর্তন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা; ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রম আধুনিকায়ন করে ইংরেজিতে প্রণয়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:১২ নিশ্চিতকরণ এবং শিক্ষক সংকট দূর করা।
দাবির মধ্যে রয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করা; কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নসহ ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সনদধারীদের জন্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করা।
প্রসঙ্গত, ভিন্ন কিছু দাবিতে আন্দোলন করছেন বিএসসি প্রকৌশলী শিক্ষার্থীরাও। বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলী শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষায় আট সদস্যের কমিটি করেছে সরকার। সেই সঙ্গে কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আজ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কমিটি ও অর্থনৈতিক) মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সরকার ‘প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের নিমিত্ত কমিটি’ গঠন করেছে। এতে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে সভাপতি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সওবা) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি প্রকৌশলী ম. কবির হোসেন, বোর্ড অব অ্যাক্রেডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. প্রকৌশলী তানভির মঞ্জুর।
কমিটির কার্যপরিধি নিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবিসমূহের যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রণয়ন কমিটি এক মাসের মধ্যে সরকারের নিকট প্রতিবেদন পেশ করবে।
কমিটি প্রয়োজনবোধে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত (কো-অপ্ট) করতে পারবে। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।