নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে ছিনতাইকারীদের হাতে হাফেজ কামরুল হাসান (২৩) খুনের ঘটনায় দুই পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের যাত্রাবাড়ী থানা।
শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার দুজনের বয়স ১৬ ও ১৭ বছর। দুই ছিনতাইকারী ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডের সময় যে পোশাক, ক্যাপ ও জুতা পরিহিত ছিল, সেই পোশাক, ক্যাপ ও জুতা পরিহিত অবস্থাতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার দুজনই পেশাদার ছিনতাইকারী। মূলত মাদক সেবনের টাকা জোগাড় করতে তারা ছিনতাই করে। তারা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মফিজুল ইসলাম।
তিনি জানান, গত ১৮ ডিসেম্বর হাফেজ কামরুল হাসান তার বন্ধুদের সঙ্গে সাজেক যাওয়ার জন্য রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হন। তিনি রাত পৌনে নয়টার দিকে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ এলাকায় নেমে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন কয়েকজন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে।
ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে চায়। ভুক্তভোগী কামরুল হাসান ছিনতাইকারীদের বাধা দেওয়ায় তাদের সঙ্গে কামরুল হাসানের ধস্তাধস্তি হয়।
একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে তার বুকে আঘাত করে। কামরুল হাসান ফ্লাইওভারের ওপর লুটিয়ে পড়লে ছিনতাইকারীরা তার কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন ও নগদ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় কামরুল হাসানকে ফ্লাইওভারের ওপর পড়ে থাকতে দেখে পথচারী রুবেল চিকিৎসার জন্য ধলপুরের ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে যান।
খবর পেয়ে কামরুল হাসানের বাবা হাসপাতালে ছুটে যান। পরে ইসলামিয়া হাসপাতাল থেকে সেদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মফিজুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে ছিনতাইকারীদের হাতে হাফেজ কামরুল হাসান (২৩) খুনের ঘটনায় দুই পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তিনি জানান, গ্রেপ্তাররা পেশাদার ছিনতাইকারী। তারা যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারসহ আশপাশের এলাকায় পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল, নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতো। হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তারা মূলত মাদক সেবনের অর্থ সংগ্রহের জন্য ছিনতাই করে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০ ডিসেম্বর কামরুল হাসানের বাবা মো. ইমাম হোসেন বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন।
ওয়ারী বিভাগের ডিসি মফিজুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ছিনতাইকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।