নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চাহিদামতো শিশুদের খুঁজতো সুলতানা আক্তার ওরফে নেহা। টার্গেট করা শিশুদের চকলেট, চিপস কিনে দিতো। নানা প্রলোভন দেখিয়ে কোলে নিয়ে সটকে পড়তো। পরে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে মোটা অংকের টাকায় ওই শিশুদের বিক্রি করতো।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এর আগে, বুধবার (২৭ মার্চ) কুমিল্লার লালমাই ও বরুড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের দুই সদস্যসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগ। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো– অপহরণকারী সুলতানা আক্তার ওরফে নেহা (২২), তার স্বামী সাইফুল ইসলাম (২৭) এবং ক্রেতা মো. শাহজাহান (৩৪)। এ সময় অপহরণ করা আড়াই বছর বয়সী শিশু তাওসীনকে উদ্ধার করা হয়।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘রাজধানীর হাজারীবাগ থানার নিউ মডেল টাউন এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। পেশায় রিকশাচালক। নুরুল দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে হাজারীবাগ এলাকায় বসবাস করেন। গত ২১ মার্চ বিকালে বাসার সামনে তার ছয় বছর বয়সী মেয়ে তাবাসসুম ও ছেলে তাওসীন খেলতে যায়। এ সময় শিশুদের নানি তাদের সঙ্গে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর একজন বোরকা পরা নারী বাসার সামনে এসে শিশুদের নানির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এর কিছুক্ষণ পর শিশুদের নানি তাদের রেখে বাসায় চলে যান। এই সুযোগে ওই নারী শিশুদের ডেকে নিয়ে চিপস কিনে দেয়। চিপস নিয়ে তাবাসসুম বাসায় ফিরে গেলেও তাওসীনকে নিজের কাছে রেখে দেয় ওই নারী। এক পর্যায়ে ওই নারী তাওসীনকে কোলে নিয়ে ঝাউচর মেন রোডের দিকে চলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার বিভিন্ন স্থানে শিশুটিকে খোঁজাখুঁজি করে। না পেয়ে শিশুর বাবা গত ২১ মার্চ হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য মাঠে নামে ডিবি রমনা বিভাগ। মামলাটির ছায়া তদন্তে নেমে অপহরণ চক্রটিকে শনাক্ত করেন ডিবির রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনাল টিমের সদস্যরা। পরে বুধবার (২৭ মার্চ) কুমিল্লার লালমাইয়ে অভিযান চালিয়ে শাহজাহানের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। ৫০ হাজার টাকায় শাহজাহানের কাছে শিশুটিকে বিক্রি করে সাইফুল-নেহা দম্পতি। এছাড়া একই দিনে বরুড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে নেহা ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।’
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যাদের সন্তান নেই বা হয় না, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা সঠিক পদ্ধতিতে শিশু দত্তক নিন। কারও কোলের শিশু চুরি করে বা অপহরণ করে নিয়ে আপনাদের কাছে দিলো, আপনারা শিশুটিকে রাখলেন– এটা অপরাধ। এমন অপরাধে আপনারাও একই মামলার আসামি হবেন। পাশাপাশি সন্তানদের পিতা-মাতাকে বলবো, আপনার শিশু বাসার বাইরে গেলে তাদের সঙ্গে পরিবারের বড় সদস্যরা থাকবেন। না হলে এমন ঘটনা আবারও ঘটতে পারে।’