বৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর ২০২৫ | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অপরাধচিত্র বিশেষ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খুলনা
  7. খেলাধুলা
  8. চট্রগ্রাম
  9. জাতীয়
  10. জেলার খবর
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. প্রবাসের কথা
  14. বরিশাল
  15. বিনোদন

সেই নূর আলী এখনো অধরা

প্রতিবেদক
Newsdesk
অক্টোবর ৯, ২০২৫ ৮:০০ অপরাহ্ণ

# শেখ রেহানার ব্যবসায়িক অংশীদার নূর আলী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে
# এখনো সক্রিয়ভাবে দখলে রেখেছেন বিভিন্ন সেক্টর
# নূর আলীর বিরুদ্ধে লুটপাট ও জালিয়াতির অভিযোগ
# বনানীর সিটি করপোরেশনের জমির ওপর বোরাক রিয়েল এস্টেট
# শেরাটন হোটেলের ২১তলার অনুমতি নিয়ে ২৮তলা কীভাবে করা হলো?

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের বিভিন্ন খাতে নূর আলীর ব্যবসায়িক প্রভাব এখনো তর্কের কেন্দ্রবিন্দু। জনশক্তি রফতানি, হোটেল ব্যবসা, বিদ্যুৎ সেক্টরসহ নানা খাত নিয়ে এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর ও অর্থদাতা নূর আলী। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী নূর আলী ইউনিক গ্রুপ ও নতুন ভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার বিরুদ্ধে রিয়েল এস্টেট, হসপিটালিটি এবং ট্যুরিজম সেক্টর, সিরামিক শিল্প, পাওয়ার প্লান্ট, জনশক্তি রফতানি, ব্যাংকিং, হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টসহ নানা সেক্টরে লুটপাট, অবৈধ দখল ও জাল-জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে শেখ রেহানার ব্যবসায়িক অংশীদার ও আওয়ামী লীগের দোসর নূর আলীর এত ক্ষমতার উৎস কোথায়। যে শেখ রেহানার তদবিরে দুদক তার বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত করেছিল সেই নূর আলী এখনো সক্রিয়ভাবে দখলে রেখেছেন বিভিন্ন সেক্টর।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নূর আলীর ক্ষমতার মূল উৎস তার রাজনৈতিক সংযোগ, বিশেষ করে শেখ রেহানার সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব। উল্লেখযোগ্য, দুদকের তদন্তও তার বিরুদ্ধে স্থগিত ছিল। এর পরেও নূর আলী এখনো বিভিন্ন খাতে সক্রিয়ভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিকারকদের সিন্ডিকেটে নূর আলীরা ছিল ৩১ জন। এই ৩১ জন বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নূর আলী ও তার সিন্ডিকেটভুক্ত সদস্যরা মালয়েশিয়ায় যাওয়া শ্রমিকদের কাছ থেকে ন্যূনতম দেড় লাখ টাকা করে নিয়েছেন। আবার কারো কারো কাছ থেকে দুই লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়েছেন। ন্যূনতম দেড় লাখ টাকা হিসাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নূর আলীর ইউনিক ইস্টার্ন (প্রা.) লিমিটেড। অথচ সরকারি হিসাবে জনপ্রতি তাদের নেয়ার কথা ছিল ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। সিআইডি সূত্র জানায়, নূর আলী নেতৃত্ব ১০ বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিকে ২০১৬ সালে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেয় মালয়েশিয়া। পেরে এসব এজেন্সি নূর আলী সিন্ডিকেট বা চক্র নামে পরিচিত পায়। নূর আলী বিরুদ্ধে অন্তত ছয় হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এরপর ২০২১ সালে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর মালয়েশিয়া সরকার প্রথমে ২৫ এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেয়। ওই ২৫ সিন্ডিকেটও ছিল নূর আলীর কব্জায়।

শুধু জনশক্তি রফতানি নয় সিন্ডিকেটের হোতা নূর আলী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দখল করে শেরাটন হোটেল, গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেল, আশুগঞ্জ ও মেঘনা ঘাটে পাওয়ার প্লান্ট, বিভিন্ন স্থানে রিসোর্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। তিন দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন।

রাজধানী ঢাকার শাহবাগে শেরাটন হোটেল দেশের প্রথম পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্ট। আওয়ামী লীগ সরকার শত কোটি টাকা ব্যয়ে শেরাটন নাম বাদ দিয়ে সেটার নাম ইন্টারকন্টিনেন্টাল করে। কিন্তু হঠাৎ করেই নূর আলী সিটি কর্পোরেশনের জমিতে অবৈধভাবে তৈরি করা ভবনে ‘ঢাকা শেরাটন হোটেল’ নাম দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। শেরাটন যেহেতু আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন এবং এর সুনাম রয়েছে সেই সুযোগে নূর আলী তার অবৈধভাবে তৈরি করা ভবনে শেরাটন নাম দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। চুক্তি ভঙ্গ করে করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪৪ কাঠা জমিতে ১৪ তলা ভবনের অনুমতি নিয়ে ৩০ তলা ভবন তৈরি করেন নূর আলী। ঢাকার সাবেক এক মেয়রের সঙ্গে দুবাইতে বসে অর্ধশত কোটি টাকা অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে নূর আলী অসম চুক্তির মাধ্যমে অবৈধভাবে এই ভবন তৈরি করেন। এই ভবন নিয়ে ইতোপূর্বে দুদক নূর আলীকে তলব করে। দুদকের বর্তমান পরিচালক ও সাবেক উপ-পরিচালক মো. আখতার হামিদ ভূঁইয়া নোটিশ আকারে তাকে তলবী চিঠি দেন। বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নূর আলীকে দুদক থেকে এ নোটিশ করা হয়। দুদকের নথিতে থাকা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বনানীর মূল সড়ক সংলগ্ন কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৬০ কাঠা জমির মধ্যে ৪৪ কাঠা জমির ওপর ১৪ তলা ভবন করার জন্য নূর আলীর বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের চুক্তি হয়। ওই জমিতে তিনতলা মার্কেট ছিল। পরে তা ভেঙে ১৪ তলা করার কথা। কিন্তু নূর আলীর প্রতিষ্ঠান চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ৩০ তলা ভবন তৈরি করে। ৪৪ কাঠা জমির ওপর অতিরিক্ত ১৬ তলা ভবন অবৈধভাবে তৈরি করে নূর আলী কি পরিমাণ অর্থ কামিয়েছেন সেই তথ্য পাওয়া যায়নি। বহুতল ওই ভবন তৈরির জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল এভিয়েশন) অনাপত্তিপত্র নেয়নি বোরাক রিয়েল স্টেট।

জানা গেছে, বনানী কাঁচা বাজরে ওই মার্কেটের মোট জমির পরিমাণ ৬০ কাঠা। তবে চুক্তি হয়েছিল ৪৪ কাঠার ওপর ১৪ তলা ভবন তৈরির। সেই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে একদিকে অবৈধভাবে ৩০ তলা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মার্কেট সংলগ্ন আরো ১৬ কাঠা জমি নূর আলীর প্রতিষ্ঠান দখল করে সেখানেও বহুতল ভবন তৈরি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকা।

বনানীর মূল সড়ক সংলগ্ন ৪৫ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে তিন বিঘা জমির ওপর ওই ভবনটি নির্মিত হয়। ভবন তৈরির জন্য ২০০৬ সালের ৭ মে করা চুক্তি হয় দু’পক্ষের মধ্যে। সেই অসম ও হাস্যকর চুক্তি অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন পাবে ভবনের মাত্র ৩০ শতাংশ এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পাবে ৭০ শতাংশ।

জানা যায়, বনানী সুপার মার্কেট কাম হাউজিং কমপ্লেক্স নামে প্রথমে ১৩ তলা ভবন নির্মাণের জন্য অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে বোরাক রিয়েল এস্টেটের চুক্তি হলেও পরে ২০১০ সালের ৪ নভেম্বর সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে বোরাক ১৪ তলা নির্মাণের জন্য সংশোধিত চুক্তি করে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ভবনটি ১৪ তলা করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়।

২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশন ভবনটিতে ১৪ তলার ওপর কোনো বর্ধিত তলা নির্মাণ না করার জন্য বোরাককে চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আগস্টে আরেকটি চিঠি দেয় এবং ১৪ তলার ওপর নির্মাণ কাজ না করার জন্য রিয়েল এস্টেটকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্মাণ কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরো জানান, ১৪ তলার স্থলে ৩০ তলা ভবন করতে হলে নতুন চুক্তি করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি। তা ছাড়া প্রতি তলা অনুযায়ী নকশা অনুমোদন করার কথা। তাও করা হয়নি এক্ষেত্রে। দুদক তড়িঘড়ি করে তদন্তে নামলেও মাঝপথে সেই তদন্ত থেমে যায়। রহস্যজনক কারণে দুদকের তদন্ত আর এগুয়নি। ওই সময নূর আলী তদন্ত ধামাচাপা দিতে শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালীদের ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও নূর আলীর বোরাক রিয়েল এস্টেটের বিভিন্ন প্রকল্প ও ভবন নিয়ে গ্রাহকের ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহা. নূর আলী মুঠোফোনে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে নূর আলীর পিএ মমিনুল হক জানান, ‘স্যার দেশে নেই। উনি লন্ডনে থাকায় তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যাবে না।’

সর্বশেষ - রাজনীতি