নিজস্ব প্রতিবেদক :
কয়েকদিন আগে ভাগিনার জন্য একটি মোটরসাইকেল কিনে দিতে মাসুক ২৫ হাজার টাকা দেয় ফয়সালকে। তবে ফয়সাল টাকা নিয়েও বাইক দিতে না পারায় চাপ দিতে থাকে মাসুক। মাসুকের চাপে ফয়সাল বাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালাতো সাইফুল। ঘটনার ৩ দিন আগে মাসুক ও ফয়সাল ভুক্তভোগী সাইফুলের মোটরসাইকেল ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছিনতাই করার জন্য ছুরি ক্রয় করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মাসুক ভুক্তভোগী সাইফুলকে এক সাংবাদিকের তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিওচিত্র ধারণের জন্য নেত্রকোণায় যেতে হবে বলে জানায়।
গত ১৩ মার্চ বিকেল ৩টায় মিরপুর ১৪ থেকে মাসুক ৩ হাজার টাকা ভাড়ায় সাইফুলকে নিয়ে নেত্রকোণার উদ্দেশ্যে রওনা করে। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে একই বাইকে উঠে ফয়সালও।
নেত্রকোণা শহরে পৌঁছানোর পর সাইফুলকে পেছন থেকে রাস্তার পাশের পাথর দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করা হয়। মাটিতে পড়ে অচেতন হয়ে গেলে ছুরি দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরিচয় গোপন করতে পরিহিত শার্ট-প্যান্ট খুলে তার মুখমন্ডল পেঁচিয়ে মোটরসাইকেলের পেট্রোল দিয়ে মুখমন্ডলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে আসে। এরপর হাতিয়ে নেওয়া মোটরসাইকেল মাসুক তার ভাগ্নেকে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
নেত্রকোণায় গলাকেটে হত্যার পর অপরাধ ঢাকতে নৃশংসভাবে লাশের মুখমন্ডল পুড়িয়ে দেওয়ার ক্লুলেস সাইফুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রহস্য উন্মোচনসহ জড়িত দুজনকে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র্যাব।
রোববার (১৮ মার্চ) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-১৪ এর একটি দল।
সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ১৪ মার্চ দুপুরে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের দেওরাজান বালুর চরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলাকাটা লাশ দেখে স্থানীয় লোকেরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করে। লাশ উদ্ধার ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। জানা যায়, নিহতের নাম সাইফুল ইসলাম। বাবা আব্দুস সামাদ, বাড়ি ঝিনাইদহ।
ওই ঘটনায় বড় ভাই বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গত রাতে র্যাব-১৪ এর একটি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের হত্যাকারী মো. মাসুক মিয়া (২৯) ও আল-ইমরান ফয়সালকে (৪৪) গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার সাইফুল হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার মাসুক ও ফয়সাল মূলত আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাই/চুরি চক্রের সদস্য। সাইফুল ৩/৪ বছর ধরে রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করে আসছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল দিয়ে ভাড়ায় চালাতেন।
গত ১০-১৫ দিন আগে গ্রেফতার মাসুক গ্রেফতার ফয়সালকে জানায় তার ভাগিনার একটা মোটরসাইকেল দরকার। সেই সুবাদে মাসুক তার ভাগিনার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে ফয়সালকে দেয়। কিন্তু ফয়সাল বাইক দিতে না পারায় মাসুক চাপ দিতে থাকে। পরে দুজন মিলে ফয়সালের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পিতভাবে তারা গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছুরি ক্রয় করে। তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিও চিত্র ধারণের জন্য নেত্রকোণায় যেতে গত ১৩ মার্চ ৩ হাজার টাকা ভাড়ায় সাইফুলকে ভাড়া করা হয়। বিকেল ৩টায় মাসুক সাইফুলকে নিয়ে মিরপুর ১৪ থেকে নেত্রকোণার উদ্দেশ্যে রওনা করে। গাজীপুর থেকে উঠে ফয়সালও।
ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছালে ট্রাফিক পুলিশ তাদের মোটরসাইকেল আটকায়। ফয়সাল নিজেকে দৈনিক শেষ খবর পত্রিকার ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চলে যায়।
নেত্রকোণা শহরে চলে আসে এবং সংবাদের তথ্য সংগ্রহের অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে।
পরবর্তীতে রাত ৩টার দিকে পাথর দিয়ে প্রথমে মাথায় সজোরে আঘাত করা হয়। অচেতন হয়ে গেলে ছুরি দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় সাইফুলের।
কমান্ডার মঈন আরও বলেন, পরবর্তীতে পরিচয় গোপন করতে গ্রেফতাররা ভুক্তভোগী সাইফুলের পরনের শার্ট-প্যান্ট খুলে তার মুখমন্ডল পেঁচিয়ে মোটরসাইকেলের পেট্রোল দিয়ে মুখমন্ডলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও সাইফুলের মোবাইল ফোন পানিতে ফেলে তারা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়। মোটরসাইকেলটি মাসুকের ভাগ্নের কাছে রেখে দুজনেই আত্মগোপনে চলে যায়।
গ্রেফতার মাসুক সম্পর্কে র্যাব মুখপাত্র বলেন, রাজধানীর মিরপুর ১৪ এলাকায় বসবাস করতো মাসুক। দিনে রাজমিস্ত্রীর কাজ আর সন্ধ্যায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রির আড়ালে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো সে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপন করে। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতার ফয়সাল রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাব গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।