নিজস্ব প্রতিবেদক :
পনেরো বছর আগে ২০০৯ সালে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে পিলখানা গণহত্যায় শহীদ সেনা অফিসারদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা এই অভিযোগ জমা দেন। এসময় তৎকালীন বিডিআরের ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে ব্যারিস্টার রাকিন আহমেদ, শহীদ কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী ফেরদৌসী, কর্নেল কুদরত এলাহীর ছেলে সাকিব রহমানসহ ১৫-২০ জন শহীদ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ দাখিলের পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীসহ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। পর্দার আড়ালের কুশীলবদের বিচারও দাবি করেন তারা। নিহত সেনা পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, তৎকালীন সেনাপ্রধানসহ অনেকেই এ ঘটনার জন্য দায়ী।
পরে শহীদ কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহরিম ফেরদৌসি বলেন, পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নৃশংসভাবে খুন হওয়ার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল। এই হত্যাকাণ্ডকে বিডিআর বিদ্রোহ বলবেন না। বিদ্রোহ এ রকম হয় না। সবকিছুই পূর্বপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ওই সময় অনেক সাংবাদিক শহীদদের দুর্নীতির অপবাদ দিয়েছেন। যা আমাদের জন্য লজ্জার। অথচ তারা সৎ কর্মকর্তা ছিলেন। যদি দুর্নীতি করে থাকে তাহলে সেগুলোর নথিপত্র তো থাকবে। এখন আপনারা এগুলো বের করেন। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দাবি জানান তিনি।
অভিযোগকারীদের আইনজীবী উদয় তাসমীর বলেন, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার সামঞ্জস্যতা পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ তার দোসররা জড়িত ছিলেন। তিনি দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলার জন্য এবং তার স্বৈরশাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য বৃহৎ এবং শক্তিশালী বাহিনীকে ধ্বংস করতে এই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছি।
তিনি আরও বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে এরমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সাবেক সেনা প্রধান, সাবেক আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা রয়েছেন। আমাদের অভিযোগ খুবই সুস্পষ্ট। দুটি বাহিনীকে ধ্বংস করে দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশপ্রেমিক এবং দক্ষ ও অফিসারদেরকে খুন করা হয়েছে। তাদের লাশে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের লাশকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। তাদের পরিবারকে আটক করে জিম্মি করা হয়েছে এবং লুটপাট করা হয়েছে। এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য। তাই কমিশন গঠনের মাধ্যমে পিলখানা গণহত্যার তদন্ত ও বিচার সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
পাশাপাশি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যেসব নিরীহ, নিরপরাধ ও নির্দোষ বিডিআর জওয়ানদেরকে বছরের পর বছর কারাগারে আটক রাখা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দিতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। ওই সময় বিদ্রোহী জওয়ানদের হাতে মারা যান ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা।
এদিকে, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে জাতীয় স্বাধীন কমিশন গঠন করেছে সরকার। গত ২ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ তথ্য জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানায়, মতামতের জন্য বর্তমানে এটি আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। তবে বিষয়টি শুনে উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলেন, কমিশনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য এনে হাইকোর্টকে জানাবেন।
জাতীয় স্বাধীন কমিশন গঠনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনি নোটিশ পাঠিয়ে সাড়া না পাওয়ায় গত মাসে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ ও বিপ্লব কুমার পোদ্দার। গত ৬ নভেম্বর এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া রিটকারীর আবেদন ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।