স্পোর্টস ডেস্ক :
সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ইতিহাস গড়লো যুক্তরাষ্ট্র। গতরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের ১১তম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান করে পাকিস্তান। জবাবে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৫৯ রান করে ম্যাচ টাই করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচটি। সেখানে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১ উইকেটে ১৮ রান করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯ রানের টার্গেটে ১ উইকেটে ১৩ রানের বেশি তুলতে না পারলে হার দিয়ে বিশ^কাপ শুরু হয় পাকিস্তানের। কানাডার পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপে ২ ম্যাচে পূর্ণ ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র।
ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। বোলিং শুরু করে ২৬ রানে পাকিস্তানের ৩ উইকেট তুলে নেয় স্বাগতিক বোলাররা। ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ৯ রানে আউট করেন পেসার সৌরভ নেত্রভালকার। তিন নম্বরে নামা উসমান খানকে ৩ রানে থামিয়ে দেন বাঁ-হাতি স্পিনার নোশতুশ কেনিজিগে। তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে পেসার আলি খানের শিকার হন ১১ রান করা ফখর জামান।
শুরুতেই চাপে পড়া পাকিস্তানকে লড়াই ফেরান অধিনায়ক বাবর আজম ও শাদাব খান। উইকেটে সেট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বোলারদের উপর চড়াও হন তারা। এতে ১২ ওভারে ৯৩ রান পেয়ে যায় পাকিস্তান। ১৩তম ওভারে শাদাবকে আউট করে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন কেনিজিগে। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৫ বলে ৪০ রান করেন শাদাব। বাবর-মাদাব চতুর্থ উইকেটে ৪৮ বলে ৭২ রান যোগ করেন ।
শাদাবের বিদায়ে ক্রিজে এসেই কেনিজিগের বলে লেগ বিফোর আউট হয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন আজম খান।
৯৮ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর বাবরের সাথে ১৮ বলে ২৭ ও শাহিন শাহ আফ্রিদিকে নিয়ে ১৪ রান যোগ করে পাকিস্তানকে লড়াকু সংগ্রহের পথে রাখেন ইফতিখার। ওপেনার হিসেবে নামা বাবর ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৩ বলে ৪৪ এবং ইফতিখার ৩টি চারে ১৮ রান করেন। এই ইনিংস খেলার পথে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিরাট কোহলিকে টপকে সর্বোচ্চ রাানের মালিক হন বাবর। ১২০ ম্যাচে বাবরের রান এখন ৪০৬৭। ১১৮ ম্যাচে কোহলির রান ৪০৩৮।
ইনিংসের শেষ দিকে আফ্রিদির ১টি চার ও ২টি ছক্কায় গড়া ১৬ বলে অপরাজিত ২৩ রানের সুবাদে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান পায় পাকিস্তান। ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সফল বোলার কেনিজিগে। ১৮ রানে ২ উইকেট নেন নেত্রভালকার।
১৬০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৫ ওভারে ৩৬ রান তুলে ভালো শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। পাওয়ার প্লের প্রথম বলে স্টিভেন টেইলরকে ১২ রানে আউট করে পাকিস্তানকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার নাসিম শাহ।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে পাকিস্তানের বোলারদের ওপড় আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল ও আন্দ্রিস গাউস। দু’জনের ৪৮ বলে ৬৮ রানের জুটিতে ১৩তম ওভারে শতরানে পৌঁছে যায় যুক্তরাষ্ট্র। এসময় ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৭ ওভারে ৫৬ রান দরকার ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের।
১৪তম ওভারের প্রথম বলে গাউসকে বিদায় দিয়ে পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন হারিস রউফ। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৬ বলে ৩৫ রান করেন গাউস। পরের ওভারের প্রথম বলে মোহাম্মদ আমিরের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেন ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৮ বলে ৫০ রান করা প্যাটেল।
পরপর দুই ওভারে যুক্তরাষ্ট্রের দুই সেট ব্যাটারকে বিদায় করে দারুনভাবে ম্যাচে ফিরে পাকিস্তান। তবে হাল ছাড়েননি আগের ম্যাচের কানাডার বিপক্ষে ৪০ বলে ৯৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলা অ্যারন জোন্স ও নীতিশ কুমার। ১৬ থেকে ১৯তম ওভারে ৩০ রান তুলেন তারা।
এতে শেষ ওভারে জয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৫ রান। হারিস রউফের প্রথম ৩ বলে ৩ রান নেন জোন্স ও নীতিশ। চতুর্থ বলে ছক্তা মারেন জোন্স। পঞ্চম বলে ১ রান নিলে, শেষ বলে ৫ রান দরকার পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের। শেষ বলে চার মেরে ম্যাচ টাই করেন নীতিশ।
চতুর্থ উইকেটে ৩৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৮ রানের জুটি গড়েন জোন্স-নীতিশ। ২টি করে চার-ছক্কায় জোন্স ২৬ বলে অনবদ্য ৩৬ রান করেন। ১টি চারে ১৪ বলে অপরাজিত ১৪ রান করেন নীতিশ। পাকিস্তানের আমির, নাসিম ও রউফ ১টি করে উইকেট নেন।
আমিরের করা সুপার ওভারে ৩টি ওয়াউড এবং মাত্র ১টি চারে ১ উইকেটে ১৮ রান তুলে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯ রানের টার্গেটে নেত্রভালকার করা প্রথম তিন বলে ইফতিখারকে হারিয়ে ৫ রান তুলে পাকিস্তান। পরের তিন বলে আসে ৭ রান। শেষ বলে ৭ রানের দরকারে পাকিস্তান ১ রানের বেশি না পেলে এবারের বিশ^কাপে প্রথম অঘটনের জন্ম দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাচ সেরা হন যুক্তরাষ্ট্রে প্যাটেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
পাকিস্তান : ১৫৯/৭, ২০ ওভার (বাবর ৪৪, শাদাব ৪০, কেনিজিগে ৩/৩০)।
যুক্তরাষ্ট্র : ১৫৯/৩, ২০ ওভার (প্যাটেল ৫০, জোন্স ৩৬*, আমির ১/২৫)।
ফল : টাই (সুপার ওভারে জয়ী যুক্তরাষ্ট্র)।
ম্যাচ সেরা : মোনাঙ্ক প্যাটেল (যুক্তরাষ্ট্র)।