নিজস্ব প্রতিবেদক :
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী দেশের বাইরে থাকায় এই হত্যাকাণ্ডের ‘মোটিভ’ এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।
ডিএমপির সদরদপ্তরে ‘ডেটাবেজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস অব রোড ক্র্যাশ’ (ডিএআরসি) সফটওয়্যার প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, অর্থাৎ এই হত্যার মোটিভ কী, তা বাংলাদেশের পুলিশ বা ভারতের পুলিশ কেউই উদঘাটন করতে পারেনি। কারণ এর যে মূল পরিকল্পনাকারী (আখতারুজ্জামান শাহীন) তিনি এখন দেশের বাইরে রয়েছেন, তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাকে গ্রেপ্তার করলেই কেবল এই হত্যার মোটিভ জানা সম্ভব হবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, যেহেতু তিনি (আনার) আমাদের সংসদ সদস্য ছিলেন, সুতরাং তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। যদিও তাদের সঙ্গে (আমেরিকা) আমাদের সেই ধরনের চুক্তি নেই। অন্য যে কোনো মাধ্যম বা কূটনৈতিক চ্যানেলে সর্বোচ্চ চেষ্টা এ বিষয়ে করা হবে।
গত ১২ মে ঝিনাইদহর কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।
গত ২২ মে সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।
খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের দেয়া তথ্যে বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডেও নেয়া হয়।
ওই তিনজন হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।
তদন্ত চালাকালীন জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে কয়েকটি খাল, জঙ্গলে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও আনারের লাশের হদিস মেলাতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।
২৪ বছর বয়সী জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আনারকে ‘খুনে’র প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদ বলেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি ‘সব কাজ’ করেছেন। আরও চার জন বাংলাদেশি এই কাজে সাহায্য করেছেন।
ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে ২৪ মে ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকের জিজ্ঞাসাবাদ করে যান। এরপর ২৫ মে কলকাতায় যান বাংলাদেশের ডিবির তিন কর্মকর্তা। তারাও কসাই জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাকে নিয়ে সেই বাড়ি ঘুরে দেখেন, যেখানে আনারকে হত্যার কথা বলা হচ্ছে।
সঞ্জিভা গার্ডেনস নামের ওই অ্যাপার্টমেন্টের সেপটিক ট্যাংক থেকে মঙ্গলবার বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। মৃতদেহ উদ্ধার করা একটি বড় বিষয় ছিলো।
তিনি বলেন, আমাদের একটি টিম কলকাতায় গিয়েছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মৃতদেহের সন্ধান ও লাশ শনাক্ত করা। যে বাড়িতে হত্যা হয়েছিলো বলে ভারতের পুলিশের কাছ থেকে জেনেছি, মঙ্গলবার সেই বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু মাংস উদ্ধার করা হয়েছে। সেটি আসলেই আমাদের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের কিনা, তা ডিএনএ টেস্ট করলে কেবল বোঝা যাবে।
মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনে বিচার হতে পারে, ভারতে ঘটনা ঘটেছে সেখানেও হতে পারে। পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নির্ধারিত হবে।