নিজস্ব প্রতিবেদক:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীমকে যৌন হয়রানি ও হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকদের ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয় বুধবার সকালে।
দুই পক্ষকে মুখোমুখি করার মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার, হারুন অর রশিদ। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।
গেলো ১৮ মার্চ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও হত্যার হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করে আসছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম। এর প্রতিকার চেয়ে ডিবি কার্যালয়ে আসেন মীম।
এ সময় কাজী ফারজানা মীম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমি মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়ার কারণে অভিযুক্ত শিক্ষকরা নানা মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। এ নিয়ে ডিবিতে অভিযোগ দিয়েছিলাম। আজ তারা এ বিষয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে ডেকেছিল।
নিজের বিভাগীয় শিক্ষক আবু সাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি জানান, যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে নিতে তাকে নানাভাবে চাপ দেয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষায় শুন্য নাম্বার দিয়ে অনার্সে আমাকে ফেল করানো হয়।
মীমের অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককেও ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত শিক্ষকরা।
অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন বলেন, ২০১৯ সালে ঘটনা ঘটেছিল- উল্লেখ করে ২০২২ সালে এসে কাল্পনিক একটি অভিযোগ দেয় মীম। এ নিয়ে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদনের ঘটনায় উচ্চ আদালতে যাওয়া ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিষয়ে ডিবি আমাদের ডেকেছে। এ বিষয়ে তারা যা জানতে চেয়েছে। আমরা তথ্য দিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে মীমের বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার একটি নিয়ম আছে। পরীক্ষকরা গোপন একটি খামে সিলগালা করে নম্বরপত্র পাঠান। মীম ঠিকমতো ক্লাসে আসত না। দ্বিতীয় সেমিস্টারের একটি কোর্সে অ্যাসাইনমন্ট ও উপস্থিতি মিলিয়ে ৪০ মার্ক থাকে। সে এর কোনো কার্যক্রমে যোগ দেয়নি, ফলে সে শূন্য পেয়েছে। সপ্তম সেমিস্টারেও চারটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়নি। ফলে সব মিলিয়ে ২৩ পায়। যেহেতু ৪০ মার্কে পাস, তাই রেজাল্ট শিটে শূন্য এসেছে।
দুই শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দুই পক্ষকে আমরা ডেকেছি। ভুক্তভোগী মীম আমাদের কাছে আবদার করেছেন, তিনি যেন স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারেন। কেউ যেন ডিস্টার্ব না করে। আমরা বিষয়টি শিক্ষকদের বলেছি।
তিনি আরও বলেন, এরপরও যদি কেউ ডিস্টার্ব করে, তাহলে মীমকে বলা হয়েছে, আমাদের ডিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে যেন জানান। তিনি পরে ব্যবস্থা নেবেন।
যৌন হয়রানির বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, এটি আমরা তদন্ত করছি। এর তদন্ত শেষ হয়নি, এ বিষয়ে পরে জানাতে পারব।
ডিবি প্রধান আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিষয় সমাধান করা তাদের কাজ নয়। মীমকে ফেল করানোর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে। তবে তাকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করবে।
ডিবি প্রধান আরও জানান, আইনশৃংখলা বা ফৌজদারি অপরাধ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিষয়ে সমাধানের এখতিয়ার পুলিশের নেই।