নিজস্ব প্রতিবেদক :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ২ হাজার ৬১৩ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭২ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯৮ জন।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে ঢামেকের কনফারেন্স রুমে ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের সামনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক ডা. মো. আশরাফুল আলম।
পরিচালক বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অনেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নিতে এসেছেন, অনেকেই ভালো হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন, এখনও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এই আন্দোলনে ঢামেকে রোগী আসা শুরু করে ১৫ জুলাই থেকে। আন্দোলনের সময়কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাক-প্রাথমিক (১৫-১৭ জুলাই), প্রাথমিক পর্যায়ে (১৮-২১ জুলাই), অন্তর্বর্তীকালীন (২২ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট), দ্বিতীয় পর্যায় (৪-৫ আগস্ট) ও পরবর্তী পর্যায় (৯-২৫ আগস্ট) ভাগে ভাগ করেন। পরিচালক জানিয়েছেন এই সময়ে মোট চিকিৎসাসেবা নিয়েছে ২৬১৩ জন।
তিনি আরও জানান, তাদের মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিয়েছে ১৬৯৬ জন, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮২৯ জন, হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে ৮৪ জন ও ৮৮টি জনকে হাসপাতালে মৃত আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই মৃত্যু হয়েছে বুলেট ইঞ্জুরিতে। দুই ধরনের বুলেটের আঘাত মৃতদেহে পাওয়া গেছে, ছররা গুলি ও শেল বুলেট।
শুরু থেকেই ঢাকা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ একাই চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিল। কিন্তু পরের দিকে বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ হাসপাতাল কিছু রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। আমরা বিজিতে ১৯ জন ও সিএমএইচে ২৬ জনকে পাঠিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি, তারা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে, অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের কাছে (ঢামেকে) রোগী আছে ৯৮ জন। এসব রোগীদের আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছি। যাদের অপারেশনের প্রয়োজন পড়ছে, আমরা নিজেরা কিনে দিচ্ছি, তাদের কিনতে হচ্ছে না।
দুচোখ হারিয়েছে ৭ জন, হাত-পা কাটা হয়েছে দুজনের। কতজন চোখ হারিয়েছে, জানতে চাইলে বলা হয়, অনেকে চিকিৎসারত আছে। এখনো বলা যাচ্ছে না তাদের অপারেশন দরকার কি না, সেটা সময়সাপেক্ষ। তবে আমাদের কাছে বর্তমান তথ্য হলো, ৭ জন দুই চোখ হারিয়েছে, খুব বাজেভাবে ইঞ্জুরি হয়েছে। এ ছাড়া ৭০ জন একচোখে খুব খারাপ ইঞ্জুরি হয়েছে। চক্ষু ইঞ্জুরির বেশির ভাগই প্যালেট ইঞ্জুরি।
বেওয়ারিশ লাশ কতগুলো এসেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক জানান, আসলে অনেকগুলো লাশ এসেছে। অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে হাসপাতালে। আমাদের কাজ মৃত্যুর পর পুলিশ কেস হলে লাশ পুলিশকে দিয়ে দেওয়া। কতগুলো বেওয়ারিশ লাশ, সেটা পুলিশই ভালো বলতে পারবে।
আন্দোলনে আহত হয়ে অনেকে হাসপাতালে এসে নিজ খরচে চিকিৎসা নিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য কমিটি করা হয়েছে পরে। প্রথম দিকে যারা চিকিৎসা নিয়েছে, তাদের অনেককেই হয়তো কিছু খরচ করতে হয়েছে। এরপর সরকারি নির্দেশনা আসার পর সবকিছু হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়েছে।
তবে দু-এক জন থাকতে পারে, যারা নিজ খরচে চিকিৎসাসেবা নিয়েছে। যারা করেছে, তাদের যথাযথ ডকুমেন্টসহ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা সেটি দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সেই নির্দেশ দিয়েছেন।
অনেকেই আহতদের সহায়তা করতে আসছেন জানিয়ে পরিচালক বলেন, আহতদের জন্য ফান্ড রয়েছে। এ ছাড়া অনেকেই সহায়তা করতে আসছে। সবাই এসে ২০১ নম্বর ওয়ার্ডে যেতে চায়, যেখানে আন্দোলনের আহতদের জন্য ডেডিকেটেড। সবাই যেন সহায়তা পায়, সে জন্য তালিকা করে নির্দেশনা দিচ্ছি। গত পরশু একজন এসে ২০ ও ৫০ হাজার টাকা করে দিয়ে গেছেন।