ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়া বাজার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্থানীয় ৩ যুবক নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাসহ আওয়ামী লীগের ৯৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনের নামে মামলা হয়েছে।
উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের চুড়ালী গ্রামের সেকান্দর আলীর ছেলে কৃষক দলের নেতা আবুল কাশেম বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌরীপুর আমলি আদালতে এ মামলা করেন।
এ ঘটনায় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে কি না তা আগামী ৩ সেপ্টেম্বরে মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন ৪ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক আসমা সুলতানা।
এ মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, সাবেক সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলুফার আঞ্জুম পপি, ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সাবেক এমপি ও সিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিতুর রহমান শান্ত,গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান সোমনাথ সাহা, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম হবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এসাইনমেন্ট অফিসার ও ঢাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সঞ্জিত দাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জুয়েল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও রমিজ উদ্দিন স্বপন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ রাজীব, সিধলা ইউপি চেয়ারম্যান ও সিধলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও গৌরীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ডৌহাখলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সরকার, বোকাইনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল মুক্তাদির শাহিন (৩৪), রামগোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি, সহনাটি ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন কাদের রুবেল, আওয়ামী লীগ নেতা মোসলেম উদ্দিন, আব্দুল আউয়াল, ভিপি বাবুল, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইকরাম হোসেন খান মামুন, উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক সোহেল রানা, পৌর যুবলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান মিথুন, পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তমাল পাঠান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক স্বাধীন, সাব্বির ইসলাম অমিত, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাজিমুল ইসলাম শুভ (৩০) ও রাফজান জনি অভি (২৮), সাবেক পৌর কাউন্সিলর আব্দুল কাদিরসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের ৯৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০ জন।
প্রসঙ্গত, গত ২০ জুলাই ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের কলতাপাড়া বাজার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিতে ডৌহাখলা ইউনিয়নের চুড়ালী গ্রামের বিপ্লব হাসান, মইলাকান্দা ইউনিয়নের পূর্ব কাউরাট গ্রামের জোবায়ের আহম্মেদ ও রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামের নুরে আলম সিদ্দিকী রাকিব নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন গৌরীপুর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন চন্দ্র রায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। এ সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৬৪ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আরও ৬০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে গৌরীপুর থানার এসআই মো. অনিক ইসলাম বাদী হয়ে ২১ জুলাই একটি মামলা করেন।