নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
নেত্রকোনায় গারো পাহাড়ি অঞ্চলের দুর্গাপুরের টংক আন্দোলনের সংগ্রামী নেত্রী কুমুদিনী হাজং মারা গেছেন। আজ শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ৯২ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামের বাড়িতে তিনি মারা যান।
বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পল্টন হাজং জানান, মৃত্যুকালে তিনি তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর এক মেয়ে ঢাকায় অবস্থান করেন। তিনি আসার পর স্বজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে অন্তেষ্ট্রিক্রিয়ার সময় নির্ধারণ করা হবে।
ব্রিটিশ শাসনামলে ঐতিহাসিক টংক আন্দোলন ও হাজং বিদ্রোহের সাক্ষী কুমুদিনী হাজং। নেত্রকোনার দুর্গাপুর সীমান্তে তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। ২০০০ সালে কুমুদিনীর স্বামী লংকেশ্বরের মৃত্যু হয়।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের সুসং জমিদারি এলাকায় টংক প্রথার প্রচলন ছিল। ফসল হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান খাজনা হিসেবে জমিদারকে দিতে হবে। ১৯৩৭ সালে শোষিত কৃষকেরা এ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন, যা টংক আন্দোলন নামে পরিচিত।
কমিউনিস্ট নেতা কমরেড মনি সিংহের নেতৃত্বে টংক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয় দুর্গাপুরের হাজং সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এরই অংশ হিসেবে কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী লংকেশ্বর হাজং অন্দোলনে জড়িত হন। তৎকালীন পুলিশ ১৯৪৬ সালে ৩১ জানুয়ারি বগেরাতলী গ্রামে হানা দিয়ে কুমুদিনী হাজংকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে রাশিমনি হাজংয়ের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় কুমুদিনী হাজংকে পুলিশ নিতে পারেনি। তবে সেখানে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান রাশিমনি হাজং ও সুরেন্দ্র হাজং। পুলিশেরও দুজন সদস্য নিহত হয়। সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে কুমুদিনী হাজংকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। এ ছাড়া তিনি অনন্যা শীর্ষদশ (২০০৩), ড. আহমদ শরীফ স্মারক (২০০৫), কমরেড মণি সিংহ স্মৃতি পদক (২০০৭), সিধু-কানহু-ফুলমণি পদক (২০১০), জলসিঁড়ি (২০১৪) ও হাজং জাতীয় পুরস্কার (২০১৮) পেয়েছেন।