বরগুনা প্রতিনিধি :
বরগুনার আমতলী উপজেলায় লোহার সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে অন্তত নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও এখনো ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে।
ভাগ্নির বিয়ে অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ১৬ জন যাত্রী নিয়ে শনিবার (২২ জুন) দুপুরে ছেলের বাড়িতে আসার সময় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত সবাই নারী ও শিশু। নয়জনের প্রাণহানির ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতের ৯ জনের মধ্যে ৭ জন শিবচর মাদারীপুরের বাসিন্দা এবং ২ জন স্থানীয় গুরুদল গ্রামের।
জানা যায়, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামের মনির হাওলাদারের মেয়ে হুমায়রা বেগমের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার। ওই অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে শনিবার দুপুর দেড়টার সময় তারা মাইক্রোবাসে আমতলী আসছিল। পথিমধ্যে মাইক্রোটি হলদিয়া বাজার সংলগ্ন লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাঝ বরাবর ভেঙে কচুরিপানায় ভরা খালে পড়ে তলিয়ে যায়। মাইক্রোবাস খালে পড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে স্থানীয়রা উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে। মুষলধারে বৃষ্টি এবং খালে নেমে উদ্ধারের কোনো সুযোগ না থাকায় উদ্ধার কাজে বিলম্ব ঘটায় অনেকেই তখন পানিতেই প্রাণ হারান। মাইক্রোটি পানির ওপরে তোলার পর ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে একের পর এক নারী শিশুসহ ৯টি মরদেহ। ৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৩ জন।
উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো হলো মাদারীপুরের শিবচর মুনী বেগম (৪০), তার ছোট মেয়ে তাহিয়া (৭), বড় মেয়ে তাসফিয়া (১১), একই এলাকার ফরিদা বেগম (৫৫), রাইতি (৩০), ফাতেমা আক্তার (৪০), রুবী বেগম (৪০), হলদিয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের মেয়ে হৃদি (৫) ও তার মা জাকিয়া বেগম (৩০)।
জীবিত উদ্ধার হওয়া ৪ জন হলেন মাহবুব খান, সোহেল খান, সুমা আক্তার ও দিশা আক্তার তারা সবাই শরিয়তপুরের বাসিন্দা।
জীবিত উদ্ধার হওয়া মাহবুব খান বলেন, ‘শুক্রবার আমরা ভাগ্নি হুমায়রা বেগমের বাড়ি হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামে যাই। সেখান থেকে একটি হাইএস মাইক্রো যোগে আজ শনিবার দুপুর ১টার সময় ভাগ্নি জামাইর আমতলীর বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রওয়ানা করি। দুপুর দেড়টার সময় হলদিয়া বাজার সংলগ্ন একটি লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাইক্রোটি মাঝ বরাবর আসার পর আকস্মিক সেতুটির ২০ ফুট ধরে ধসে মাইক্রোসহ কচুরি পানায় ভর্তি খালে পড়ে যায়। এর পর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে, আল্লায় মোগো বাচাইলেও সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে।’
আরেক জীবিত মাহবুব খান বলেন, ‘৯ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। ৭ জন আমাদের মাদারীপুরের সবাই স্বজন। অন্য দুজন আমতলীর তারাও আমাদের অত্মীয়। সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে এর চাইতে আমাদেরও মইর্যা যাওয়া ভালো ছিল।’
স্থানীয় হলদিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘সেতু ভেঙে মাইক্রোটি খালে পড়ে যাওয়ার পর আমরা খবর পেয়ে দ্রুত উদ্ধার কাজে নেমে পড়ি। ৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও ৯ জনের সলিল সমাধি ঘটে। এত বড় দুর্ঘটনা এবং এতগুলো মরদেহ আমার জীবনেও আমি আর দেখি নাই।’
দুর্ঘটনার পর খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। আবহাওয়া এবং মুষলধারে বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ কিছুটা বিলম্ব হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এম কাদের, আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আমির হোসেন সেরনিয়াবাদ ওসি শাখাওয়াত হোসেন তপু ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধার কাজ তদারকি করেন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বরগুনার সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু বিকালে আমতলী হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন এবং সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।