ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এর মধ্যে ময়মনসিংহের তারাকান্দায় তিনজন ও ফুলপুরে আটজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২০ জুন) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারাকান্দার রামচন্দ্রপুর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অ্যাম্বুলেন্স এবং রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফুলপুরের ইন্দারাপার মোড়ে যাত্রীবাহী বাস ও মাহিন্দ্রার সংঘর্ষে এ পৃথক দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার শুরুতে ৯ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়। সবশেষ ফুলপুরে আরও দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে।
তারাকান্দায় নিহতরা হলেন- জেলার ধোবাউড়া উপজেলার বরাটিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল বারেকের স্ত্রী জবেদা খাতুন (৮৫), ফুলপুর উপজেলার মদীপুর সুতারপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে রাকিবুল হাসান (১৫) ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের শুইলাম বুধবারিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম (৩৫)। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলম সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন।
ময়মনসিংহের ফুলপুরে নিহত আট জনের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
তারা হলেন- ফুলপুর উপজেলার কাজিয়াকান্দা গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে ফরিদ মিয়া (৩৮), নিশুনিয়াকান্দা গ্রামের ময়েজ উদ্দিনের ছেলে জহর আলী (৭০), বাট্টা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী হাসিনা খাতুন (৫০), পার্শ্ববর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার কয়ারহাটি গ্রামের মৃত হাজী জবান আলীর ছেলে শামসুদ্দিন (৬৫) ও রংপুরের আজিম উদ্দিন (৩৫)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেলে যাত্রীবাহী একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা তারাকান্দা থেকে ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ময়মনসিংহ-শেরপুর আঞ্চলিক সড়কের রামচন্দ্রপুর এলাকায় হিমালয় ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার যাত্রী এক নারী ও এক শিশু নিহত হয়। এসময় অটোরিকশার চালক, অ্যাম্বুলেন্সের চালক ছাড়াও আরও তিন যাত্রী আহত হন। আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অটোরিকশার চালক মোহাম্মদ আলম মারা যান।
এদিকে রাতে হালুয়াঘাট থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী বাংলা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আর ফুলপুর থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী মাহিন্দ্রা হালুয়াঘাটের দিকে যাচ্ছিল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসটি ইন্দারাপার মোড়ে কুরিয়ার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় আসতেই বিপরীত দিক থেকে আসা মাহিন্দ্রার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই মাহিন্দ্রায় থাকা চার পুরুষ ও এক নারী নিহত হন; গুরুতর আহত হন আরও আটজন। হতাহতদের মধ্যে দুইজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ছয়জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই বাস চালক পালিয়ে যান। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
সবশেষ ফুলপুর উপজেলা কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।
ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম সীমা। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে ছয়জনের পর মমেক হাসপাতালে আরও দুজনের মারা যান। তবে তাদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাদি বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে দিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। নিহতদের মধ্যে সবাই মাহিন্দ্রার যাত্রী ছিলেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থাও প্রক্রিয়াধীন।