রাজশাহী ব্যুরো :
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এবার রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ২৫ জন সহকারী পুলিশ সুপারকে (এএসপি) শোকজ করা হয়েছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে তাদের কাছে এই চিঠি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বিসিএস ৪০তম ব্যাচের ৬৩ জন ও ৩৮ তম ব্যাচের তিন জনসহ মোট ৬৬ জন শিক্ষানবিশ এএসপি এক বছর মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। এর আগে দুই দফা তাদের সমাপনী কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে শোকজের কপি গণমাধ্যমের হাতে এসে পৌঁছেছে। পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিকস) মো. তানভীর সালেহীন ইমন কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন।
১৫ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত এক এএসপিকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণ চলাকালে ২৬ নভেম্বর বিকেলে দৌড় না দিয়ে তারা এলোমেলোভাবে হেঁটে চলা শুরু করেন। তাদের কারণে অন্যরা সঠিকভাবে দৌড়াতে পারছিলেন না। দৌড়ানোর কথা বলা হলেও তাতে কর্ণপাত না করে কটূক্তিমূলক কথা বলেন। এতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ ছাড়া তারা অন্যদের শৃঙ্খলা ভঙ্গে উৎসাহিত করে।
নোটিশে আরও বলা হয়, আপনার এ ধরনের কার্যকলাপ ও আচরণ কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য, কর্তব্যে অবহেলা এবং শৃঙ্খলার পরিপন্থী, যা অসদাচারণের শামিল। আপনার এহেন কার্যকলাপ ও আচরণের প্রেক্ষিতে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর কেন প্রেরণ করা হবে না তার কারণ ব্যাখ্যা পূর্বক নোটিশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে লিখিত বক্তব্য দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
এর আগে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে কয়েক দফায় ৩১০ জন ক্যাডেট উপ-পরিদর্শকদের (এসআই) শোকজ করার পর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে এএসপিদের এটাই প্রথম শোকজ।
জানা যায়, গত বছরের ২০ অক্টোবর এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয় ৬৬ জন সহকারী পুলিশ সুপারের (এএসপি)। এক বছর প্রশিক্ষণ শেষে এ বছরের গত ২০ অক্টোবর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এ জন্য দেড় হাজারের বেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে আগের রাতে হঠাৎ করেই কুচকাওয়াজ স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর আবারও ২৪ নভেম্বর এই অনুষ্ঠানের জন্য দিন ঠিক করা হয়েছিল। পরে ১৯ নভেম্বর আবারও তাদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়। এবার ৬৬ জনের মধ্যে ২৫ জনকে শোকজ করা হলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শোকজ নোটিশ পাওয়া একজন প্রশিক্ষণরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বলেন, ৩৬৫ দিন ধরে প্রশিক্ষণ হলেও সমাপনী কুচকাওয়াজ না হওয়ায় আমরা ৪২০ দিন ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। দীর্ঘ এ সময়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মতো কোনো কাজ আমরা করিনি। যেদিনের ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেদিন তেমন কিছু ঘটেনি। তারপরও এসআইদের যেমন ভাবে প্রথমে শোকজ করে পরে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তেমন ভাবে আমাদেরও শোকজ করা হয়েছে।
আরেকজন শোকজ পাওয়া প্রশিক্ষণার্থী বলেন, ৪০ তম বিসিএসে যোগ দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারসহ অনেক ক্যাডার দুই বছর পার করে ফেলেছেন। একই ব্যাচের এডমিন ক্যাডাররা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। সব ক্যাডার চাকরিতে বহাল আছে, অথচ শুধুমাত্র পুলিশ ক্যাডারদের ঝামেলায় ফেলা হচ্ছে। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে কেন বৈষম্য করা হচ্ছে।
তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, অভিযোগ রয়েছে প্রশিক্ষণরত এএসপি ব্যাচের অধিকাংশই দলীয় (আওয়ামী লীগ) বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত। এজন্য প্রশিক্ষণরত এসব এএসপিদের জীবনবৃত্তান্ত নানা ভাবে তদন্ত করে দেখা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল এডিশনাল আইজিপি মাসুদুর রহমান ভুঞার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।