ইউএসএ প্রতিনিধি :
হাজার মাইল দূরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা লসএঞ্জেলেস এর ব্যস্ততম সড়কে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাংলাদেশের ৫২তম ‘বিজয় দিবস’ এবং ‘লিটল বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করলো বাংলাদেশিদের সংগঠন ‘বাংলার বিজয় বহর’। দুপুর ২টায় শতাধিক গাড়িকে লাল সবুজের পতাকায় সাজিয়ে লিটল বাংলাদেশ এলাকা থেকে গাড়ীর বহর শুরু হয়। গাড়ীর এই বহরের সময় রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন দেশের জনগণ হাতে তালি দিয়ে স্বাগত জানায়। লিটল বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে গাড়ীর বহর শেষ হয় লিটল বাংলাদেশ চত্বরে। ১৭ই ডিসেম্বর রোববার লসএঞ্জেলেসে বাংলার বিজয় বহর অনুষ্ঠিত হয়।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালায় ছিল সকাল সাড়ে ১০ থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বার্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রা ও সন্ধ্যা ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্বামী শুভানন্দপুরি মহারাজ নতুন প্রজন্মদের দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
লসএঞ্জেলেস এর জনপ্রিয় উপস্থাপক মিঠুন চৌধুরী সাজিয়া হক মিমি’র সঞ্চালনায় কন্ঠশিল্পী সিমি ইসরাইল, কাবেরী রহমান, উর্মি আতাহার, আর্জিন কামাল, এপোল হাফিজুর রহমানকে সাথে নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে আমন্ত্রিত কন্ঠশিল্পী শাহ মাহবুব ও নাজু আকান্দ জমকাল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপহার দেন। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে বাঙালিদের ঢল নেমে আসে লিটল বাংলাদেশ চত্বরে। বাংলার বিজয় বহর এর সহ-সভাপতি সুলতান শাহরিয়ার বাবু বলেন দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও শান্তির শ্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ এর পতাকা তলে উপস্থিত হয়ে প্রবাসে একখন্ড বাংলাদেশ আজ তুলে ধরেছে। আজ আমরা স্বাধীন দেশে বসবাস করছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন আজও পুরোপুরি পূরণ হয়নি। আমাদের দেশে এখনও গণতন্ত্রের চর্চা নেই, আইনের শাসন নেই, দুর্নীতি ও অনিয়ম বিরাজমান। তাই আমাদের সকলের উচিত এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য একসাথে কাজ করা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ লস লসএঞ্জেলেস (বালা)র সাংগঠনিক সম্পাদক এহতাশামল হক শ্যামল জানান, এবারের আয়োজন অতীতের চেয়ে অনেক বেশি সুসংগঠিত, এবার লোক সমাগমও অতীতের তুলনায় অনেক বেশি। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও বাংলার বিজয় বহরে উপদেষ্টা সৈয়দ এম হোসেন বাবু, বলেন যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর এবং উৎসবমুখর পরিবেশে মহান বিজয় দিবস উদযাপন হচ্ছে সেই সাথে আমাদের নতুন প্রজন্মের রং ও তুলিতে স্বাধীনতা ও মক্তিযোদ্ধ ফুটে উঠেছে।
বাংলার বিজয় বহরে চ্যান্সেলর ডাঃ মোহাম্মদ সিরাজউল্লাহ বলেন, মহান বিজয় দিবসে বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন আজ। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও বাংলার বিজয় বহরের উপদেষ্টা সৈয়দ এম হোসেন বাবু বলেন, আজকের এই মহান বিজয় দিবসে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনিই ছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির মহান নেতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন আজ। প্রথমেই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি আমাদের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের।পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন আজ। বিজয় মানেই আনন্দ, বিজয় মানেই উচ্ছ্বাস। বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা হয়ে বিজয়ী পক্ষ আনন্দের বাঁধ ভেঙে ফেলবে এটাই হওয়া স্বাভাবিক।
১৪তম বাংলার বিজয় বহরের সভাপতি ইসমাইল হোসেন বলেন, সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। বিজয় দিবস বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে একটি গৌরবময় দিন।এই দিনেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম লেখা হয়। বিজয় দিবসের তাৎপর্য ও ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এটি করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিজয় দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। স্থিরচিত্র সাংবাদিক মোঃ লুৎফর রহমান খান বলেন, আমি অনেক অনুষ্ঠানের ছবি তুলেছি কিন্তু আজকের আয়োজন আমার দৃষ্টিতে সকল আয়োজনকে ছাড়িয়ে গেছে দল মত নির্বিশেষে সবাই একাকার হয়ে গেছে আজ।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ক্যালিফোর্নিয়া শাখার সভাপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান নিরু বলেন, বিজয় দিবসের এই দিনে আমরা আবারও স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস। আমরা জানি, এই বিজয় আসেনি সহজে। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা এ বিজয় অর্জন করি। এই বিজয়ের পিছনে রয়েছে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য আত্মত্যাগ ও বীরত্ব। বাংলাদেশ এর সুর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহেদুল মাহমুদ জামি বলেন, বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে লিপ্ত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ চলতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত বিজয় ছিনিয়ে এনেছি আমরা। বাংলাদেশের এই যুদ্ধ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ। পরাধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধ, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ। মহান বিজয় দিবস আমাদের জন্য একটি আনন্দের দিন। এই দিনটিতে আমরা আনন্দ-উৎসব পালন করি। আমরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাই। আমরা আমাদের বিজয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করি।
বাংলার বিজয় বহরের প্রক্তন আহ্বাক আবু হানিফা বলেন, স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধুর আহব্বানে যারা স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা, নারী-পুরুষ-শিশু, যারা যুদ্ধের বিভিন্ন রণাঙ্গনে অসীম সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ত্রিশ লক্ষ শহীদ, যারা তাদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে সদ্য আগত নতুন প্রজন্ম আরিফুল নীরব বলেন, সমাজের কাছে আমরা প্রত্যেকেই দায়বদ্ধ। আমাদের ঋণ পরিশোধের দায়-দায়ি ও কর্তব্য রয়েছে। ক্ষুধার্তকে খাদ্য এবং অক্ষরকে জ্ঞানের আলো দিয়ে এই স্বাধীনতাকে সার্থক করে তুলতে হবে। তাই সব ধরনের বিভেদ-বিচ্ছেদ ভুলে, হানাহানি ও সংঘাত দূর করে, সংকীর্ণ স্বার্থপরতা জলাঞ্জলি দিয়ে দেশ গড়ার কাজে ব্রতী হই। দেশের ও সমাজের স্বার্থের প্রশ্নে সকল বিবেকবান মহলেরই একযোগে কাজ করা উচিত। এখানে বিভেদ নয়, ঐক্য কাম্য।তবে এবারও দেখা মেলেনি বাংলার বিজয় বহরের সাথে জন্মলগ্ন্যে অনেক সদস্যের এর মধ্যে শামসুদ্দিন মানিক, সাংবাদিক মোঃ জাফরুল্লাহ, ডাঃ মোয়াজ্জেম ও ডাঃ রুবী হোসেন, কে এম জামান, ইয়াহিয়া, সৈয়দ দিলির হোসেন দিলির, অভিনেত্রী নিপা মোনালিসা প্রমুখ। তার অনুপস্থিত কেন জানতে চাইলে সংগঠনের কর্মকর্তাদের কাছে থেকে কোন সত্য উত্তর পাওয়া যায় নি। তবে বিজয় বহরের বিওটি চেয়ারম্যান মজিব সিদ্দিকি বলেন, আমি বহুবার তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি কিন্তু কেউ যদি আপনার ডাকে সারা না দেন তখন কি করার।