বুধবার , ৪ জুন ২০২৫ | ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অপরাধচিত্র বিশেষ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খুলনা
  7. খেলাধুলা
  8. চট্রগ্রাম
  9. জাতীয়
  10. জেলার খবর
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. প্রবাসের কথা
  14. বরিশাল
  15. বিনোদন

লস এঞ্জেলেস-এ বাঙালি সংস্কৃতির দীপ্তি ছড়াচ্ছেন সৈয়দ এম হোসেন বাবু

প্রতিবেদক
Newsdesk
জুন ৪, ২০২৫ ৬:৩১ অপরাহ্ণ

অপরাধচিত্র ডেস্ক: একটি দেশের পরিচয় পাওয়া যায় সে দেশের সংস্কৃতির মাঝে। সংস্কৃতিই আমাদেরকে বিশ্বময় স্বাতন্ত্র হিসেবে তুরে ধরে। বাঙালির আছে হাজার বছরের সংস্কৃতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বাঙালি তার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি লালন করেই ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। বাঙালি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কোনো বাংলা ভাষা, বাংলার স্বকীয় সংস্কৃতির ভিতরে থেকে নিজিকে প্রতিষ্ঠিত করে- গড়ে তোলে অনন্য নজির হিসেবে।
স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশ-বিভূঁইয়ে যারা আপন সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরছেন সৈয়দ এম হোসেন বাবু সেই সংস্কৃতিযোদ্ধাদের মাঝে একজন। তিনি শুধু একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নন একজন সফল সংগঠকও। যাঁর নেতৃত্বে লসএঞ্জেলেস-এ প্রবাসী বাঙালিরা খুঁজে পান দেশের পরশ, ধানের ডগায় বাতাসের শিষদেয়া, নদীর বুকে মাঝির গলায় ভাটিয়ালি। সৈয়দ এম হোসেন বাবু এরই মাঝে অসংখ্য জমকালো ও স্মরণীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপহার দিয়েছেন লসএঞ্জেলেস-এ প্রবাসী বাঙালিদের।
লস এঞ্জেলেসে প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে তিনি একজন প্রিয়মুখ। যিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে। তাঁর উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে সংগীতানুষ্ঠান, চাঁদরাত, কবিতা সন্ধ্যা, বৈশাখী মেলা এবং বাফলা’র সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা- যেগুলোর লক্ষ্য শুধু বিনোদনই নয়।
২০০৬ সাল ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য। সে বছর লস এঞ্জেলেস শহরে জন্ম নেয় একটি উদ্যোগ- বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মকে তাদের শেকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত রাখার জন্য গঠিত হয় ‘বাংলা পাঠশালা’। এই পাঠশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রবাসে জন্ম নেওয়া শিশু-কিশোরদের বাংলা ভাষা শেখানো এবং তাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত করা। প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশুরা অনেক সময় তাদের মূল পরিচয় থেকে দূরে সরে যায়। তারা ইংরেজি বা স্থানীয় ভাষায় পারদর্শী হলেও বাংলা ভাষার প্রতি দূরত্ব তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেই সৈয়দ এম হোসেন বাবুর উদ্যোগে কিছু নিবেদিতপ্রাণ অভিভাবক ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দর সহায়তা নিয়ে ‘বাংলা পাঠশালা’র প্রতিষ্ঠা। বাংলা পাঠশালার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সাপ্তাহিক ক্লাসের মাধ্যমে। প্রতিটি ক্লাসে শিশুদের শেখানো হতো বাংলা বর্ণমালা, শব্দ গঠন, বাক্য নির্মাণ এবং সহজ কবিতা ও ছড়া। ধীরে ধীরে পাঠ্যসূচিতে যুক্ত হয় বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় কবিদের রচনা, লোকসংগীত ও নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুশীলন।
বিশেষ দিনগুলো, যেমন- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস আয়োজন করা হতো আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে। আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা নৃত্য, গান, কবিতা আবৃত্তি এবং নাটক পরিবেশন করতো। এই পাঠশালার সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল নতুন প্রজন্মের মাঝে আপন সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয় গড়ে তোলা। তারা শিখেছে যে তারা শুধু একজন আমেরিকান নাগরিক নয়, বরং তারা একটি গৌরবময় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী। বাংলাদেশ নামক একটি দেশের প্রতিনিধি। সেই ছোট্ট পাঠশালা আজ অনেক দূর এগিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এখন নিজেই অন্যদের শেখাতে আগ্রহী। প্রবাসে বসেও তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভালোবেসে বড় হচ্ছে। এটাই ছিল পাঠশালার সবচেয়ে বড় সাফল্য।
সৈয়দ এম হোসেন বাবুর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এমন সব অনুষ্ঠান; যেখানে বাংলাদেশের খ্যাতিমান শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেছেন, পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিভাবানরাও পেয়েছেন নিজেকে প্রকাশের মঞ্চ। এইসব আয়োজন লস এঞ্জেলেসের প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে তৈরি করেছে একতা- গড়েছে বন্ধন এবং মনে করিয়ে দিয়েছে- “আমরা বাঙালি, আমরা ঐহিত্যবাহী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী। প্রবাসে থেকেও যে মাতৃভাষা ও সংস্কৃতিকে ভালোবাসা যায় তা সৈয়দ এম হোসেন বাবু বারবার প্রমাণ করেছেন। তাঁর এই নিরলস প্রচেষ্টা প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে জীবন্ত রেখেছে।
স্বাধীনতার পর লসএঞ্জেলেস-এ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠিত করতে যাঁরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে সৈয়দ এম হোসেন বাবু একটি উজ্জ্বল নাম। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রথম সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ লস এঞ্জেলেস (BALA)–এর মাধ্যমে তিনি সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ সংগঠনের নেতৃত্বে তিনি দুইবার সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে প্রমাণ করেছেন তাঁর সংগঠকসুলভ দক্ষতা ও প্রবাসীদের প্রতি দায়বদ্ধতা।
সৈয়দ এম হোসেন বাবুর নেতৃত্ব কেবল BALA-তেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি জাতীয় পর্যায়েও নিজের দক্ষতা ও নেতৃত্বের ছাপ রেখেছেন। ৩৬তম ফোবানা সম্মেলনে Federation of Bangladeshi Associations in North America (FOBANA)’র তিনি সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নানান প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও তিনি এক সফল ও সুশৃঙ্খল ফোবানা সম্মেলন উপহার দিতে সক্ষম হন। তাঁর এই সাফল্য শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠান পরিচালনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ছিল প্রবাসী সমাজের ঐক্য, সংস্কৃতি ও জাতীয় পরিচয়ের বহির্প্রকাশ।
আজ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে সৈয়দ এম হোসেন বাবু একজন সম্মানিত নাম। তাঁর নেতৃত্ব, ত্যাগ ও নিরলস পরিশ্রম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে। ফোবানা ও অন্যান্য সংগঠনের মাধ্যমে তিনি যে পথ দেখিয়েছেন তা আজও প্রবাসীদের মধ্যে ঐক্য গঠনে অনুপ্রেরণা জোগায়।
সৈয়দ এম হোসেন বাবুর অবদান কেবল একজন সংগঠক হিসেবে নয়, বরং প্রবাসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও ঐতিহ্যকে লালন-সংরক্ষণের এক অনন্য প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা ও সফল নেতৃত্ব প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সর্বশেষ - জেলার খবর