নিজস্ব প্রতিবেদক :
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরাই বেশি বেশি মানবাধিকারের কথা বলে, নানা প্রেসক্রিপশন দেয়।
তিনি আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবে চিটাগাং জার্নালিস্ট ফোরাম ঢাকা (সিজেএফডি) আয়োজিত জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য ও সিজেএফডি’র সাবেক দুই প্রয়াত সভাপতি এম ওয়াহিদ উল্লাহ এবং শীলব্রত বড়–য়া’র স্মরণসভায় বিশ্ব মানবাধিকার দিবস প্রসঙ্গে এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। এখন দেখা যাচ্ছে যে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তারা মানবাধিকার নিয়ে বেশি কথা বলা শুরু করেছে। দেশে আগুনসন্ত্রাস চালিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা এবং অবরোধ ডেকে দিনের পর দিন মানুষকে যারা অবরুদ্ধ করে রাখতে চায়, মানুষ তাদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যখন স্বাভাবিক কাজকর্ম চালায়, তখন চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে মানুষের অধিকার হরণ করে, মানবাধিকার হরণ করে তারা আবার প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে মানবাধিকারের কথা বলে। এটিই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।’
বিশ্ব প্রেক্ষাপটেও চরম মানবাধিকার হরণকারীদের পক্ষে যারা অবস্থান নেয়, তারা এখন মানবাধিকারের প্রেসক্রিপশন দেয়, এটিই হচ্ছে পৃথিবী ও মানব সভ্যতার জন্য দুর্ভাগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, পাখি শিকার করার মতো করে তারা মানুষ শিকার করছে, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, ১৮ হাজার নিহত মানুষের মধ্যে ১৩ হাজার নারী ও শিশু। সেখানে হত্যা বন্ধের বিপক্ষে যারা কথা বলে, সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালানোর জন্য যারা ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করে তারা আবার বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রেসক্রিপশন দেয়, এটিই বিশ্ববাসীর জন্য দুর্ভাগ্য।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের দেশকে অপরাজনীতির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এবং আমাদের দেশে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে, স্বাধীনতার ৫২ বছর পর দেশ যাতে ঠিক খাতে প্রবাহিত হয় সেটি রক্ষা করতে হলে আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব রয়েছে। সাংবাদিক সমাজ সেই ক্ষেত্রে সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, আজকের প্রেক্ষাপটেও পালন করবে।’
প্রয়াত সাংবাদিক এম ওয়াহিদ উল্লাহ ও শীলব্রত বড়ুয়া সাংবাদিক সমাজের উজ্জল মুখ ছিলেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তারা গণমাধ্যমের জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন। সাংবাদিক হিসেবে লোভ-লালসার উর্ধ্বে থেকে পেশাগতভাবে তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের কাজ করে গেছেন।
একটি রাষ্ট্রের বিকাশের জন্য ভালো সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় রাষ্ট্র পথ হারিয়ে ফেলে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন তারাও অনেক সময় পথ হারিয়ে ফেলে, সে ক্ষেত্রে একজন সাংবাদিক কিন্তু রাষ্ট্র যাতে সঠিকখাতে প্রবাহিত হয় এবং যারা দায়িত্বে থাকেন তারা যাতে খেই হারিয়ে না ফেলে সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আজকে যারা সাংবাদিক সমাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা ভালো সাংবাদিক তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন।’
গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তৃতির সাথে সাথে এই পেশা এবং গণমাধ্যমে অনেক চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেমন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অনেকের গণমাধ্যমের সাথে গুলিয়ে ফেলা, ভূঁইফোড় অনলাইনের সাংবাদিক, মোবাইল সাংবাদিক -এ ধরণের নানা বিষয় আজকে যুক্ত হয়েছে। এতে করে দেখা যাচ্ছে যে, আসলে কে সাংবাদিক আর কে সাংবাদিক নয় এই পার্থক্যের সীমারেখাটা জনগণ টানতে পারে না। এ জন্য এখানে শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।’
সিজেএফডি’র সভাপতি মামুন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমানের সঞ্চালনায় দুই প্রয়াত সাংবাদিকের জীবনের ওপর আলোকপাত করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সিজেএফডি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শাহিন উল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন জঙ্গী, মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সিটি এডিটর (বাংলা) কানাই চক্রবর্তী, বিশেষ প্রতিনিধি অনুপ খাস্তগীর, একুশের টিভির ডেপুটি হেড অব নিউজ সাইফ ইসলাম দিলাল, সিজেএফডির সহসভাপতি শিবুকান্তি দাশ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
এম ওয়াহিদ উল্লাহ’র স্ত্রী বেগম ওয়াহিদ, ছেলে আসিব ওয়াহিদ এবং শীলব্রত বড়ুয়ার পরিবারের পক্ষে বাসসের প্রধান বার্তা সম্পাদক (ইংরেজি) সমীর বড়ুয়া বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, প্রয়াত এম ওয়াহিদ উল্ল¬াহ চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর ঢাকা ব্যুরোতে এবং শীলব্রত বড়ুয়া দৈনিক ইত্তেফাকে দীর্ঘকাল নিষ্ঠার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। আমৃত্যু সাংবাদিকতার পেশায় নিয়োজিত থাকা দুই গুণী সাংবাদিক সাদাসিধে জীবনের কারণে সকালের শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।