নেত্রকোনা থেকে জাহিদ হাসান :
নেত্রকোণায় সিএনজি চালকদের বিরুদ্ধে ঘন ঘন মামলা দেয়াকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ সিএনজি চালকরা দ্বিতীয় দিনের মতো কয়েক ঘণ্টা শহরের মুক্তারপাড়া পৌরসভার সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখে। এসময় জেলা শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাভিক করতে অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক মৃদুল রঞ্জন দাস ও পরিদর্শক আকবর হোসেনকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ফয়েজ আহমেদ।
জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশা ও সিএনজি চালক শ্রমিক ইউনিয়নের চালকরা অভিযোগ করে বলেন, জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল রঞ্জন দাস দায়িত্বে আসার পর থেকেই চাঁদা না দিলে ট্রাফিক পুলিশ জেলা শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি থামিয়ে নানা অজুহাতে একই গাড়ির বিরুদ্ধে মাসে ৩/৪ বার মামলা দিচ্ছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে সিএনজি চালকরা পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন চালাতে যেখানে হিমসম খাচ্ছে, সেখানে আবার মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়ায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক নেতা বলেন, ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, অনেক সময় তারা শ্রমিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, বাবা-মাকে তুলেও গালিগালাজ করে। সোমবার সকাল ১১টার দিকে কুড়পারস্থ সিএনজি স্ট্যান্ডে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশ আকবর হোসেন মামলা দিলে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তা অবরোধ করে। এসময় ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল রঞ্জন দাসের অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে অটোটেম্পু, অটোরিকশা ও সিএনজি চালকরা।
কুড়পাড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের (এএসআই) আকবর হোসেন জানায়, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা আজ সোমবার কুড়পার এলকায় তিনটি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেই। এসময় শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুইটি গাড়ি জোর করে ছাড়িয়ে নেয়। আমরা তাদেরকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহবান জানালে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের সাথে হাতাহাতি করে।
বিষয়টি জানতে চাইলে জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশা ও সিএনজি চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ বিল্লাল শেখ বিল্লাল জানান, পুলিশের বেপরোয়া চাঁদা বাজিতে আমরা অতিষ্ট। নিয়মিত তাদের চাঁদা না দিলেই তারা ড্রাইভারদের আটকিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। শ্রমিকরা অতিষ্ট হয়ে এখন অবরোধে নেমেছে। প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে আমরা অবরোধ প্রত্যাহার করি।
নেত্রকোনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও (প্যানেল মেয়র-২) হেলাল উদ্দিন শেখ বলেন, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার করার অভিযোগ রয়েছে। শ্রমিকদের দাবী টিআই-কে প্রত্যাহারে। বিয়ষটি নিয়ে পুলিশের উদ্বোতনদের সাথে কথা বলা হবে। আর কোন নিরপরাধ শ্রমিক যেন মামলার হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে কথা বলা হবে।
শ্রমিকদের হয়নানির বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল রঞ্জন দাস ও আকবর হোসেনের মুঠোফোনে কল করে রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শিবলী সাদিক কথা বলতে রাজি হননি। তবে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ লুৎফর রহমান বলেন, পুলিশের সাথে সিএনজি শ্রমিকদের ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনা করে উদ্ভুত পরিস্থিতি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। পরে তারা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। মঙ্গলবার দেড়টার দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে নেত্রকোণার পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শিবলী সাদিক পৌরসভার মোড়ে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নেয়।