স্পোর্টস ডেস্ক :
সাকিব আল হাসান যা পারেননি, সেটা তামিম ইকবাল পেরেছেন। যেন দুই বছর আগের হারের সেই ক্ষত শুকানোর মতো। কিংবা মধুর প্রতিশোধ। যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে ১ রানে হেরে বিপিএলের শিরোপা বঞ্চিত হয়েছিল ফরচুন বরিশাল, সেই দলকে হারিয়েই আজ প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলেছে তারা। তাতে টুর্নামেন্টটি পেয়েছে এক নতুন চ্যাম্পিয়ন।
গত দুই আসরে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবারই প্রথম হারল বিপিএলের ফাইনালে। আর তাতে ফাইনালে সবার আগে ওঠেও এ যাত্রায় তাদের ছুঁয়ে দেখা হল না ট্রফি। তামিম-মুশফিক-রিয়াদদের জন্য মিরপুর হোম অব ক্রিকেটের ৩০ হাজারের বেশি দর্শকের তুমুল সমর্থন পেয়েছে বরিশাল।
দলকে শিরোপার স্বাদ এনে দেওয়ার দিনে মোট ৪৯২ রান করা তামিম আছেন রান সংগ্রাহকদের শীর্ষস্থানে। বল হাতে সুনীল নারাইনের উইকেট শিকারের পর ব্যাটিংয়ে কাইল মায়ের্স ছিলেন উজ্জ্বল, ৩০ বলে খেলেন ৪৬ রানের ইনিংস। এমন অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্সের রাতে ফাইনাল সেরার পুরষ্কার ওঠল মায়ের্সের হাতে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৭ উইকেটে হারিয়ে প্রথম বিপিএল শিরোপা ঘরে তুলল ফরচুন বরিশাল। হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ মিস করল লিটন দাসের দল। আগে বিপিএল শিরোপা জিতলেও এবারের ট্রফি নিয়ে আলাদা ভালবাসা রয়েছে তামিমের। জাতীয় দলে জায়গা হারিয়েছেন, তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নিজের সুযোগ মিস করতে চাইলেন না তামিম। এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করে নিজের নামের ওজনটা আরও ভারী করেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এনে দিলেন শিরোপার স্বাদ। তামিমের অধিনায়কত্বে হয়ে গেল আরও এক রেকর্ড; মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মিরাজ প্রথমবারের মতো উঁচিয়ে ধরতে পারল বিপিএল শিরোপা।
১২০ বলে ১৫৫ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট চালান তামিম ইকবাল ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই ওপেনারের আক্রমণের সামনে এদিন পাওয়ার প্লেতে কুমিল্লার বোলাররা যেন অসহায় হয়ে পড়ে। পাওয়ার প্লের ৩৬ বলে আসে ৫৯ রান। তবে কুমিল্লা ব্রেকথ্রু পায় ইনিংসের ৮ম ওভারের শেষ বলে। মইন আলি ওভারের প্রথম পাঁচ বলে খরচ করেন ১৫ রান, শেষ বলে ভাঙেন তামিমের স্টাম্প। ৩৯ রানে তামিমের বিদায়ে ভাঙে ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। মাত্র ২৬ বলে এদিন সমান ৩ ছয় ও চারে এই দাপুটে ইনিংস সাজিয়ে যান বরিশালের ক্যাপ্টেন। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তামিম থাকলেন টপে, ১৫ ম্যাচ খেলা তামিমের নামের পাশে এখন ৪৯২ রান।
মেহেদী হাসান মিরাজও এরপর শিকার হয়েছেন মইন আলির। সাজঘরে ফেরার আগে ২৬ বল খেলা মিরাজ ২ ছক্কা ও ১ চারে করেছেন ২৯ রান। ৮২ রানে দুই উইকেট হারানো বরিশালকে অবশ্য জয়ের কাছে যেতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। কাইল মায়ের্স উইকেট এসেই চালান তান্ডব। অপর পাশে থাকা মুশফিকুর রহিম স্ট্রাইক পরিবর্তন করে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যান মায়ের্সকে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মায়ের্স ফাইনালেও জ্বলতে ভুল করলেন না।
দারুণ খেলতে থাকা মায়ের্স অবশ্য খুব কাছে গিয়েও মিস করেন ফিফটি। মুস্তাফিজের শর্ট বলে পুল খেলতে গিয়ে মইন আলির হাতে ক্যাচ হয়েছেন ৩০ বলে ৪৬ রান করা কাইল মায়ের্স। এরপর মুশফিকুর রহিমও ক্যাচ হন শর্ট বল খেলার চেষ্টায়। ব্যক্তিগত ১৩ রানে মুশফিক যখন উইকেট হারিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাটেন, তার দল তখন জয় থেকে কেবল ১১ রান দূরে। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর ডেভিড মিলার মিলে দলের জয় নিশ্চিত করে আসেন।
মেগা ফাইনালে এর আগে ফরচুন বরিশালের আমন্ত্রণে আগে ব্যাট করতে নেমে হোঁচট খায় কুমিল্লার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন। শুরুর ১০ ওভারে ৪ উইকেটে ৬৭ রান, তবে পরের ৬০ বলে তারা পেয়েছে ৮৭ রান। আন্দ্রে রাসেলের শেষ বেলার তান্ডবে বরিশালের সামনে দাঁড়ায় ১৫৫ রানের টার্গেট। রাসেলের ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংসে ৬ ছিল ৪টা। এর আগে মাহিদুল অংকন ৩৫ বলে করেন ৩৮ রান।
আন্দ্রে রাসেল ব্যাট হাতে নামার পর ১৯তম ওভারে জেমস ফুলারকে খরচ করান ২১ রান। একাই হাঁকান ৩ ছক্কা। তবে শেষ ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বল হাতে দেখান ক্যারিশমা। ওভারে ৩ ওয়াইড, ১ নো দিলেও কোনো বাউন্ডারি হজম করেননি সাইফউদ্দিন। রান খরচ করেন কেবল ৭। আর তাতেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ইনিংস থামে ৬ উইকেটে ১৫৪ রানে।