নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, সামনে এডিস মশার (ডেঙ্গু) প্রকোপ বাড়তে পারে। তাই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বুধবার (৪ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সকালে চতুর্থ ও শেষ দিনের ডিসি সম্মেলেনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত তাদের সঙ্গে আলোচনার নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশা নিধনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে-এ কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এডিস মশার প্রকোপ বাড়ার শঙ্কা জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে ডিসিদের। এর আগে কিন্তু আরবান এরিয়াতে এডিস মশার আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। কারণ গ্রামেও এখন নতুন ভবন ও অনেক বাড়ি-ঘর তৈরি হচ্ছে। পানি জমে থাকার সুযোগ আছে৷ সেজন্য গ্রামাঞ্চলেও কিন্তু এডিস মশার প্রজনন হতে পারে।
মন্ত্রী আরও বলেন, এর আগেও একটি ভার্চুয়াল সভায় জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদেরকে অনেকগুলো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজও ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্ব অনুধাবন করছে যে, এডিস মশা মোকাবিলা করতে হলে সবচেয়ে বেশি দরকার বা হাতিয়ার হলো ৯০ শতাংশ জনসচেতনতা তৈরি করা। আর বাকি ১০ শতাংশ টেকনিক্যাল বা মেডিটেশন। তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন৷ এটা যদি সম্ভব হয়, তাহলে এডিস মশার প্রজননটা রোধ করতে পারবো।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরের অবস্থা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আগে যদি ঢাকার বাইরে এক পারসেন্ট এডিস মশার প্রকোপ দেখতাম, বাকি ৯৯ শতাংশই কিন্তু দেখা যেত ঢাকা শহরে। গত বছর এডিস মশার প্রকোপ ঢাকায় কমেছে ২০ শতাংশের নিচে। কিন্তু ঢাকার বাইরে বেড়েছে ৮০ শতাংশ। আগে প্রতিদিন যত মানুষ ঢাকায় আক্রান্ত হতো, এখন তা হচ্ছে ঢাকার বাইরে। তারমানে ঢাকাবাসী এখন অনেক সচেতন হয়েছে। এডিস মশাকে মোকাবিলার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য টিভিসি প্রচার করা হচ্ছে। মানুষ সেটা দেখে দায়িত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। যে কারণে ঢাকায় এডিস মশার প্রকোপ কমেছে ও সফলতা এসেছে।
জেলায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডিসিদের কী বলেছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা নিজ নিজ এলাকা সম্পর্কে জেনেছি এবং তাদেরকে বলা হয়েছে এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। তারা জনসচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ করছেন। তাছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি সঠিকভাবে দেখভাল করা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে ডিসিদের রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু সচেতনতাতে ডিসিরা তো তদারকি করবেন, আর রিপোর্ট করবেন। আর কার কী দায়িত্ব, সেটা তো বণ্ঠন করে দেয়াই আছে। আমরা কিন্তু গত জানুয়ারিতেই সভা করেছি এ নিয়ে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা ধরে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। গত বুধবারেও সভা করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য পাঁচ কোটি টাকার ঔষধ কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রস্তুতিগুলো চলমান। মন্ত্রণালয় তথা সরকারের পক্ষ থেকে যে, সমস্ত পদক্ষেপ জনসচেতনতায় প্রচার করা দরকার, তা করা হচ্ছে।
সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-এ নির্বাচন কেন্দ্রীক কোনো নির্দেশনা ডিসিদের দেয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন তো হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন যেসব সহযোগিতা চাইবে, তা করা হবে। তবে নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কোন ইন্টারভেনশন বা ইন্টারফেয়ার নাই। নির্বাচনের ব্যাপারটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের অংশ নয়। এটা নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে পুরো ক্ষমতা দেয়া আছে। নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসকরা ব্যবস্থা নেবেন, মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। তবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের বাড়তি কোনো নির্দেশনা থাকাটা, নির্বাচন কমিশনারের জন্য সহায়ক বলে আমি মনে করি না।
তাজুল ইসলাম বলেন, ডিসি সম্মেলনে ২৫৬টা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন ডিসিরা। বেশিরভাগই হচ্ছে রাস্তাঘাট সংস্কারের ২২টা প্রস্তাব।
পৌরসভা ও উপজেলার যেসব রাস্তা সংস্কার করার বিষয় রয়েছে তারা এসব বিষয়ে কোনো সুপারিশ করেছেন কিনা বা আলোচনা হয়েছে কি না। এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন,
এসব তো আলোচনায় অনুপস্থিত থাকার কথা নয়। জাতীয়ভাবে একটা লক্ষ্যমাত্র স্থির করা আছে। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত বাংলাদেশ বানাবো। উন্নত বাংলাদেশ বানাতে হলে তো, আমাদের উন্নত রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। ধারাবাহিক, উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে যদি কোনো অসামঞ্জস্য থাকে, তবে তা সমাধান করা হবে, এ ব্যাপারে ডিসিদের রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।
সমবায়ভিত্তিক কৃষিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সমবায়ভিত্তিক কৃষি, সমবায়ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। সমবায়ের ব্যাপারে আমরা কাজ করার কথা বলেছি। সমবায় ব্যবস্থাপনাকে আরও বেশি গতিশীল ও শক্তিশালী করার ব্যাপারে বলেছি।
স্থানীয় জলাশয় ও পানি সংরক্ষণ করার বিষয়ে ডিসিদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কিনা? কারণ গত বছর এ আবহাওয়ায় পানি সংকট তৈরি হয়েছিল৷ তখন প্রধানমন্ত্রী জলাশয়গুলো সংরক্ষণে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
এসব প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আজকেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি নিজে প্রয়োজনে নির্দেশনা দিয়েছি। পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পানির ব্যবহারে আমাদের সঠিক বাস্তবমুখি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের যেসব পানির জলাশয় আছে, তা সংরক্ষণ করতে হবে। নদী নালা খাল বিল যাতে ভরাট না হয়, সেজন্যও উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে।