নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের গাউছিয়া টুইন পিক টাওয়ারে থাকা অনুমোদনহীন ১৩ রেস্টুরেন্ট সিলগালাই থাকবে জানিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, পিক অ্যান্ড চুজ নয়, অনুমোদনহীন সব রেস্তোরাঁয় অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাজউকের অভিযানে সিলগালা হওয়া ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের গাউছিয়া টুইন পিক টাওয়ারের ১৩ রেস্টুরেন্ট খুলতে চেয়ে করা আবেদনে সাড়া দেননি বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ।
এদিন শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন অভিযান পরিচালনাকারী রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সারোয়ার।
রাজউকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইমাম হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আদালত রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কথা শুনেছেন, রেস্তোরাঁখাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইন অনুযায়ী অভিযান চালু রাখতে বলেছেন।
এরআগে হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ বেইলি রোড ট্র্যাজেডির পর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে অভিযানে গ্রেফতারকৃত রেস্তোরাঁ শ্রমিকদের তালিকা চেয়েছিলেন। সেসময় ঢালাওভাবে শ্রমিকদের গ্রেফতার করা কেন অবৈধ হবে না, তা চেয়েও রুল জারি করা হয়।
চলতি মাসের সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অভিযানে ধানমন্ডির গাউছিয়া টুইন পিক টাওয়ারে অনুমোদনহীন ও নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা ১২টি রেস্তোরাঁ সিলগালা করা হয়। রেট্রো লাইভ কিচেন নামের রুফটপ রেস্টুরেন্টটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া জরিমানা করা হয় ১টি রেস্তোরাঁকে। টুইন পিক টাওয়ারে রেস্টুরেন্ট করার অনুমোদন নেই। অফিসের জন্য অনুমোদিত এই ভবনে অবৈধভাবে চলছিল রেস্টুরেন্ট ও ফুডকোর্ট।
রাজউকের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সারোয়ার ভবনটিতে অভিযান পরিচালনার সময় বলেছিলেন, এ ভবনটি মূলত এফ ওয়ান ক্যাটাগরির। এটি অফিসের জন্য রাজউক থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ভবনটি এফ ওয়ান ক্যাটাগরি অনুসারে অফিস হিসেবে ব্যবহার করা কথা। কিন্তু আমরা পরিদর্শনে মাত্র দুই ফ্লোরের কিছু অংশে অফিস হিসেবে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি পেয়েছি। বাকি অংশগুলোতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ১২ থেকে ১৫টি রেস্টুরেন্টকে ভাড়া দেয়া হয়েছে। তার সঙ্গে ওষুধ ও কাপড়ের দোকানও রয়েছে। রাজউক ছাড়াও সিটি করপোরেশন কিংবা কলকারখানা অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদেরকেও বিষয়টি অবগত করব। যেন নিয়মের ব্যত্যয় যারা ঘটিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়।
ভবনটির ছাদে নকশাবহির্ভূতভাবে গড়ে তোলা রেট্রো লাইভ কিচেন নামের রুফটপ রেস্টুরেন্টটি গুঁড়িয়ে দেয়ার পর তিনি আরও বলেন, আমরা ছাদে থাকা রেস্টুরেন্টটি ভেঙে দিয়েছি। রাজউকের নকশায় স্পষ্টত দেখানো হয়েছে ভবনের ছাদ খোলামেলা। তারপরও কীভাবে এখানে রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।
১৪ তলা ভবনটির নাম গাউসিয়া টুইন পিক। অবস্থান রাজধানীর ধানমন্ডিতে, সাত মসজিদ রোডের একেবারে মাঝামাঝি এলাকায়। চাপ ঘর, কাভান সিগনেচার, আদি কড়াই গোস্ত— এরকম স্বনামধন্য সব রেস্তোরাঁর অবস্থান এ ভবনে। এছাড়াও রয়েছে দ্য লবি বুফে, হোয়াইট হল বুফে, প্যান প্যাসিফিক লাউঞ্জ, মেরিটেজ ঢাকা। ছাদে রুফটপ রেট্রো লাইভ কিচেনও।
খাদ্যপ্রেমীদের আনাগোনায় জমজমাট ভবনটি, যেখানে ১৪ তলা মিলিয়ে রেস্তোরাঁর সংখ্যাই প্রায় ১৫টি, সেই ভবনটি কি না রেস্তোরাঁ হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিতই নয়! গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের ভয়াবহ আগুনের ঘটনার ৪৬ জনের প্রাণহানীর পর নড়েচড়ে বসে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। শুরু হয় অভিযান। এরমধ্যে বেশ কিছু হোটেল রেস্টুরেন্ট ও রেস্তোরাঁ সিলগালা ও জরিমানা করা হয়েছে।
বেইলি রোডের আগুনের পরদিনেই গাউসিয়া টুইন পিক এসেছিল আলোচনায়। ভবনটির স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ নিজেই ফেসবুক পোস্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে ভবনটি। তিন দিন পর সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনটিতে অভিযান চালায়। অভিযানে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও দেখতে পান একই চিত্র। অফিস হিসেবে অনুমোদন নেয়া ফ্লোরে দিব্যি চলছিল রেস্তোরাঁ। পার্থক্য হলো অন্যান্য দিন ভরদুপুরে যখন এসব রেস্তোরাঁ থাকে কানায় কানায় পূর্ণ, ওইদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে দেখেন, গোটা ভবন যেন খাঁখাঁ করছে! বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজউক অভিযান চালাবে— এমন খবর পেয়েই মালিকরা তৎক্ষণাৎ বন্ধ করে দিয়ে সটকে পড়েন।