নিজস্ব প্রতিবেদক :
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠতি বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি, ট্যালেন্ট হান্টিং ও মডেলিংয়ের নামে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো। আগ্রহীরা যোগাযোগ করলে কৌশলে তোলা হতো নগ্ন ছবি। এরপর শুরু হতো ব্লাকমেইল। শুধু তাই নয়, নগ্ন ভিডিও কলেও যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা হতো। সেগুলোর ভিডিও ধারণ করে অনলাইনে চালানো হচ্ছিল যৌন ব্যবসা।
এসব অসামাজিক কাজের নেতৃত্বে ছিলেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ও তার খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন ।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর চক্রটিকে শনাক্ত করে প্রধানসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার।
গ্রেপ্তাররা হলেন- চক্রের প্রধান ও মেডিকেল শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান ও তার প্রধান সহযোগী খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন, মো. জাহিদ হাসান কাঁকন, তানভীর আহমেদ ওরফে দীপ্ত, সৈয়দ হাসিবুর রহমান, শাদাত আল মুইজ, সুস্মিতা আক্তার ওরফে পপি ও নায়না ইসলাম।
গতকালমঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও যশোরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও তরুণীদের ব্ল্যাকমেইলে ব্যবহৃত ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, ১টি ল্যাপটপ এবং আয়ের টাকা লেনদেনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চক্রটি মূলত উঠতি বয়সী তরুণীসহ যেসব তরুণীরা পারিবারিক ভাঙনের শিকার ও আর্থিক সমস্যা রয়েছে তাদের টার্গেট করত। চক্রটি কাজের সুযোগ দেওয়ার নামে ইন্টারভিউতে ডাকত। এরপর তাদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে সুযোগ দেওয়ার কথা বলে আপত্তিকর ছবি নিতো। প্রাথমিকভাবে কাজে আগ্রহী তরুণীদের চাহিদা মতো টাকা ও প্রয়োজন মেটাতো তারা। এরপর ধীরে ধীরে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করতো তারা।
এই চক্রের প্রধান মেহেদী হাসান। তিনি টঙ্গীর ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তারই তার খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন মিলে এই চক্রটি গড়ে তুলেছিল তারা। শেখ জাহিদ কল্যাণপুর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী।
তারা চিকিৎসাবিদ্যার আড়ালে অল্প বয়সী তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট তৈরি ও টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করতো।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে নিজেদের আড়াল করার সব কলাকৌশলও এই চক্রের জানা। ফলে শত শত মোবাইল সিম ব্যবহার করলেও তাদের কোনোটিই প্রকৃত ন্যাশনাল আইডি দিয়ে নিবন্ধন করা নয়। এক্ষেত্রে তারা নিম্নআয়ের মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিতো। সামান্য অর্থ দিয়ে তোলা হতো সিম কার্ড। কন্টেন্ট আদান-প্রদান ও সাবস্ক্রিপশনের জন্য ছিল টেলিগ্রাম প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্ট এবং বিভিন্ন পেইড ক্লাউড সার্ভিস। অল্প বয়সী ভয়ানক চতুর এই দুই মেডিকেল শিক্ষার্থীর কাছে জিম্মি কয়েক হাজার নারী। আছে টিকটক, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম সেলিব্রেটিও।
তিনি বলেন, অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপে গোপনে ধারণ করা প্রায় ১০ লাখ নগ্ন ছবি ও ২০ হাজার অ্যাডাল্ট ভিডিও এর সন্ধান পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া চক্রের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।