নিজস্ব প্রতিবেদক :
কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সোমবার বিকেলের পর দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুপক্ষ। এতে অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে প্রথম মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসে। পরে সেখানে মিছিল নিয়ে আসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এরপর দলে দলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। আন্দোলনকারীদের দাবি, সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডের কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে আসলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দুই দিকে অবস্থান নিয়ে পরস্পরের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মাস্টার দা সূর্যসেন হল ক্যাফেটেরিয়ার সামনে অবস্থান নেয়। আর বিজয় একাত্তর হলের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এ সময় কিছুক্ষণ পরপর এক পক্ষের শিক্ষার্থীরা অপর পক্ষকে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া দিতে থাকে। সংঘর্ষের পর উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়কেও অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরে ছাত্রলীগ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এরপর সেখান থেকে আহত শিক্ষার্থীদের নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাদের অধিকাংশের মাথা থেকেই রক্ত ঝরতে দেখা গেছে।
আহত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ইডেন কলেজের ভেতরে ছাত্রলীগের হামলায় ৬ ছাত্রী আহত হন। এছাড়া রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর, জিয়া হল, শহীদুল্লাহ হল ও বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের কর্মীরা কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের উপরে হামলা চালায়। এতে আন্দোলনকারীরা আহত হন।
পরে ঢাকা মেডিকেলের সামনেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একই সময় শহীদুল্লাহ হলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় আন্দোলনকারীরা হলের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন।
সংঘর্ষ চলার সময়ে শহীদুল্লাহ হলের সামনে দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনের ফটকে বিপুল পরিমাণ আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে জরুরি বৈঠকে বসেছে প্রভোস্ট কমিটি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা নবম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করা করে। ফলে সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ নারী কোটা, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ১০ শতাংশ জেলা কোটা বাতিল হয়ে যায়।
পরে ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে। ওই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এতে সরকারি চাকরিতে আবারও কোটা ফিরে আসে।
বিষয়টি আপিলে গেলে গত ৯ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। ৪ জুলাই আপিল বেঞ্চ জানায়, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মামলাটির শুনানি শুরু হবে। গত ১১ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশ দেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, ঝুলন্ত কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা মানবেন না।