নিজস্ব প্রতিবেদক :
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ দুই সংসদ সদস্যের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সিটি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে আবুল হোসেনকে নিয়োগ দেন। এই আবুল হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আইভীর নিজ নামে নারায়ণগঞ্জ মহানগরে রয়েছে চার-পাঁচটি ফ্ল্যাট। তার ব্যক্তিগত সহকারী আরিফ হোসেনকে সংশ্লিষ্ট পদে পদায়ন না করে একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করা হয়। আইভীর গাড়ি চালকের নামে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বর কল এবং পানির কল এলাকায় দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন আইভীর দুই ভাই আলী রেজা রিপন এবং আহম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল। নারায়ণগঞ্জে সাততলা বিশিষ্ট এক বিশাল বাড়ি, নারায়ণগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী চিত্ত বিনোদন ক্লাব ভেঙে সেখানে একটি মার্কেট নির্মাণ করেন আইভী। বাংলাদেশ রেলওয়ের ১৮ একর জমি দখল করে সেখানে শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণ করেন। এসব সম্পদ ও দুর্নীতি ছাড়া তার নামে, তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি ও নিকটাত্মীয়দের নামে আরও অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয় বর্হিভূত সম্পদ রয়েছে বলে দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে তার দুর্নীতির প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আকতারুল ইসলাম জানান, নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়শা ফেরদৌস ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে– হাতিয়া বাজারে বহুতল ভবন, ভূইয়ার হাটে তিনতলা বাড়ি, পুশালী বাজারে চারতলা মার্কেট। তার স্বামীর নামেও বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, ব্যাংকে টাকা, গাড়ি এবং মৎস্য ব্যবসাসহ নানা সম্পদ রয়েছে। অথচ ২০০৯ সালের আগে আয়শা ফেরদৌস ছিলেন একজন সাধারণ গৃহিণী। তার আয়ের কোনও উৎস ছিল না। পরবর্তী সময়ে এমপি নির্বাচিত হয়ে নিজ নামে ও নির্ভরশীলদের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন।
দুদকের এই উপ-পরিচালক বলেন, যশোর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ নামে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ৭০ হাজার টাকা এবং ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ তোলা স্বর্ণ। ২০২৩ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮ হাজার টাকা। স্ত্রীর সম্পদ ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ছেলে রাজিব কুমার রায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি কাজের জন্য পাঁচ শতাংশ হারে কমিশন নিতেন। তার নিজের ও ছেলের নামে ভারতের সল্টলেক এলাকায় বাড়ি রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জমি দখল, মানিলন্ডারিং, নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজিসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সঠিক হয়েছে। এ জন্য তার সম্পদের প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।