নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি কেন বারবার নির্বাচনের কথা বলছে—এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচনের কথা বারবার বলছি। অনেকে প্রশ্ন করেছেন, এত নির্বাচনের কথা বলেন কেন? কারণ আমি মৌলিকভাবে গণতন্ত্র বিশ্বাসী একজন মানুষ। আমি বিশ্বাস করি যে, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংস্কার কখনোই সফল হতে পারে না।’
আজ শনিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইয়ুথ পার্লামেন্ট অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ন্যাশনাল ইয়ুথ ফোরাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ফখরুল বলেন, একটা নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ সম্ভব। ওটা যদি কার্যকর করা যায়, তাহলে পুরো বিষয়গুলো গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে জঞ্জাল সৃষ্টি করে গেছে, সেই জঞ্জালগুলোকে সরিয়ে একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যাতে করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা যুবকদের চাওয়া, তরুণদের চাওয়া যে নতুন বাংলাদেশ, সেটা তৈরি করতে পারি।’
বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথাবার্তার কারণে ফ্যাসিবাদ আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন তিনি। এমন কথাবার্তা না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘বিভিন্ন রকম নেতিবাচক কথাবার্তার কারণে ফ্যাসিবাদ কিন্তু মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গায় এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের কিছু কিছু গণমাধ্যম সেটি প্রোমোট করছে। যেটা আমি মনে করি, এগুলো কখনই জনগণের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।’
সহনশীলতার সঙ্গে বিরাজমান সংকট মোকাবিলারও আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সংকট আছে, সেই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ ধৈর্য ধরে আমাদের যে কাজগুলো, সেই কাজ সংস্কার এবং নির্বাচন। এগুলো যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারি, সেই কাজগুলো আমাদের করতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারকে সময় দিতে হবে। তাঁদের আমরা দায়িত্ব দিয়েছি, তাঁরা কাজ করছেন। এই তিন মাস সময়ের মধ্যে এরা অনেক কাজ করেছে। অস্বীকার করারও উপায় নেই। সংস্কার করার জন্য তাঁরা কমিশন গঠন করেছে, আইন পরিবর্তন করেছে, আইনগুলো নিয়ে কাজ করছে। বেশ কিছু ফ্যাসিবাদের দোসরদের আটক করেছে, বিচারের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ করে তরুণদের বলব, ওই অনুরোধটুকু করব যে, আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে, যাদের নেতৃত্বে এই সরকার চলছে তাদের নেতৃত্বে যেখানে ছাত্ররাও এর মধ্যে আছে, তরুণেরাও এর মধ্যে আছে। আমি বিশ্বাস করি তারা নিশ্চয়ই সেই জায়গাটাতে পৌঁছাতে পারবেন। একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এবার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেই সুযোগ যাতে কোনো মতেই হাতছাড়া না করি। এবার এই সুযোগ হারিয়ে গেলে আমাদের জাতি হিসেবে অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। আমি এই কথাটা জোর দিয়ে বলতে চাই।’
ন্যাশনাল ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মুনিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত হাফেজ মোহাম্মদ ইমরান এবং আহত হাফেজ তোফায়েল আহমেদের পরিবারকে এই অনুষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়।