নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও রাস্তা পারাপারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিরপুরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি। নির্দিষ্ট সময়ে লাল ও সবুজ বাতি দেখে থেমে যাচ্ছে গাড়ি। রাস্তা পারাপারের সুযোগ পাচ্ছে মানুষ।
রাজধানীর মোট ২২টি পয়েন্টে এমন স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি চালুর প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরার পাশাপাশি যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে বলে মনে করছে ট্রাফিক বিভাগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো, বাবা মনির হোসেনের কোলে চড়ে নিরাপদে রাস্তা পারাপারের অপেক্ষায় ছোট্ট সাইম। সিগন্যাল বাতি লাল থেকে সবুজ হলেই ৩০ সেকেন্ডের জন্য থেমে যাবে গাড়ি। আর তখনই জেব্রা ক্রসিং ধরে তারা পার হবেন এই ব্যস্ত সড়ক।
রাস্তা পারাপারের অপেক্ষায় স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীসহ অনেকেই। রাজধানীতে জেব্রা ক্রসিং মেনে রাস্তা পারাপারের নিয়মটা নগরবাসী ভুলে গেছে। তবে, এর উপকারটা জানেন সবাই।
জাইকার অর্থায়নে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সহযোগিতায় ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্টের (ডিআরএসপি)’ আওতায় নিরাপদ পথচারী পারাপারের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে মিরপুরে চালু হলো এই প্রকল্প। ঢাকা রোড ট্রাফিক সেইফটি প্রজেক্ট নামের এই প্রকল্পের আওতায় পথচারীদের জেব্রা ক্রসিং ও ট্রাফিক সিগান্যাল মানতে সচেতন করা হচ্ছে।
পাইলট প্রকল্পের আওতায় মিরপুরের ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এবং মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে অবস্থিত পথচারী ক্রসিংয়ে প্রতিদিন (ছুটির দিন ছাড়া) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
পিক আওয়ারে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএনসিসি যথাযথভাবে রাস্তা চিহ্নিত করে ওই ক্রসিংটি প্রশস্ত করেছে। এ সময় একটি পোর্টেবল ট্র্যাফিক লাইটও স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে পথচারীরা পুশ বোতাম চাপ দিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য সিগন্যাল পাবেন। পথচারীদের সহায়তায় এবং ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশ সেখানে মোতায়েন থাকবে।
এই এলাকাটি বাছাই করা হয়েছে কারণ আশেপাশে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অনিরাপদ পারাপার, অপর্যাপ্ত পারাপারের স্থান, অবৈধ পার্কিং ও জেব্রা ক্রসিংয়ে অননুমোদিত বাস থামানোর মতো একাধিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত হয়েছে।
যানবাহনের প্রতি নির্দেশনা: ট্রাফিক সিগন্যাল ও লাইট মেনে চলতে হবে। ট্রাফিক লাইট হলুদ বা লাল হলে স্টপ লাইনের আগে থামতে হবে। জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর কোনোভাবেই যানবাহন থামানো যাবে না।
পথচারীদের প্রতি নির্দেশনা: রাস্তা পার হওয়ার আগে ফুটপাতে অপেক্ষা করতে হবে। ট্রাফিক লাইট সবুজ হলে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করে রাস্তা পার হতে হবে। রাস্তা পার হতে ফুটপাথের ট্রাফিক লাইট পোলের পুশ সুইচে চাপ দিতে হবে এবং সবুজ সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ঢাকা রোড ট্রাফিক সেইফটি প্রোজেক্টের কোর্ডিনেটর সঞ্জয় রয় জানান, গত রোববার থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম চলবে আগামী ৮ মে পর্যন্ত। শিগগিরি বুয়েটের সহযোগিতায় রাজধানীর আরও ২২টি পয়েন্টে চলছে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি চালুর উদ্যোগ। ফার্মগেট, বাংলামোটরসহ কয়েকটি বসানো হয়েছে বাতি।
রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ও দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। অতিরিক্ত কমিশনার সারওয়ার বলছেন, আপাতত পরীক্ষামূলক হলেও ভবিষ্যতে রাজধানী জুড়ে এই ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে ২০২৪ সালে সারাদেশে দুর্ঘটনায় মারা গেছে এক হাজার ৯ জন পথচারী। এদের বেশিরভাগই রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।