নিজস্ব প্রতিবেদক :
ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সত্তা এবং সত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট ১৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই আদেশ দেয়।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, এস. আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব মো. আকিজ উদ্দিন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম মোজাম্মেল হক, ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম, মো. আলনার আলী, বেদার উল ইসলাম, মো. জসিম উদ্দিন, রোখসানা খাতুন, রবিয়া খাতুন, নাছির উদ্দিন, মুহাম্মদ সাইফু উদ্দিন, মো. গোলামুর রহমান, এস. এম জামাল উদ্দিন, হাসমত আরা বেগম ও মুহাম্মদ সাইফু উদ্দিন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
দুদকের পক্ষে উপপরিচালক (মানিলন্ডারিং) তাহাসিন মুনাবীল হক তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সত্তা ও সত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং সংগঠনের অভিযোগটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে টিম লিডার করে একটি যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের সময় দেখা যায়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এস আলম গ্রুপভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের আত্মীয়-স্বজনের নামে বেনামে ঋণ ও বিনিযোগ দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে তাদের বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করে মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘঠন করে বিদেশে টাকা পাচার এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে, এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশত্যাগ করার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে চলে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হবে। অনুসন্ধান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তার বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত আবশ্যক।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দেশে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের প্রধান সাইফুল আলমকে (এস আলম)। বিগত সরকারের সময়কার আলোচিত ও প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যাংক খাতের অর্থ লুটপাটসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে।
স্ত্রীসহ সাবেক আইনমন্ত্রীর এপিএস রাশেদুলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এপিএস মো. রাশেদুল কাউসার ভূইয়া ও তার স্ত্রী মোসা: লুৎফুন নাহারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছে একই আদালত।
দুদকের পক্ষে উপসহকারি পরিচালক মিজানুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, সাবেক আইনমন্ত্রীর এপিএস মো. রাশেদুল কাউসার ভূইয়ার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকা, ভারতে গরু পাচার করা এবং টেন্ডার ও বদলি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রাশেদুল কাউসার ভূইয়া সপরিবারে দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশ গমন আটকানো প্রয়োজন।
ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রোগ্রামার আব্দুল কাদেরের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রোগ্রামার মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের ৭ কোটি ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৯ টাকা মূল্যের জমি ও ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেয়।
জব্দের আদেশ দেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ঢাকার মুগদা থানাধীন মান্ডায় অভিযুক্ত আব্দুল কাদেরের নামে থাকা ৪ দশমিক ৭ কাঠা জমি এবং ওই জমিতে নির্মিত ১০ তলা ভবনে বিনিয়োগ করা ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯ টাকার সম্পদ। এছাড়াও রয়েছে মান্ডায় ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ জমি ও ৬ হাজার ৫৪০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, যার মূল্য ১ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার ৯০০ টাকা।
দুদকের পক্ষে সম্পদ জব্দের আবেদন করেন উপপরিচালক মাহবুবুল আলম।
আবেদনে বলা হয়, আব্দুল কাদের ক্ষমতার অপব্যবহার, ত্রাণের টাকা আত্মসাৎ, বদলি ও জনবল নিয়োগের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণসহ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, যা দুদক অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ অবৈধ উপায়ে হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া প্রয়োজন।