সোমবার , ২ জুন ২০২৫ | ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অপরাধচিত্র বিশেষ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খুলনা
  7. খেলাধুলা
  8. চট্রগ্রাম
  9. জাতীয়
  10. জেলার খবর
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. প্রবাসের কথা
  14. বরিশাল
  15. বিনোদন

ডেসকোর ম্যানেজার ইউসুফের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

প্রতিবেদক
Newsdesk
জুন ২, ২০২৫ ৭:৪০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্র্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) সংকটের মুখে পড়েছে। যেখানে একাধিক গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে, ডেসকোতে সকল অপকর্মের মাষ্টারমাইন্ড কর্পোরেটস একাউন্টসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। এমন কোন অপকর্ম নেই,যা তার পরিকল্পনায় ঘটেনা।

ডেসকোর কর্মকতা-কর্মচারী সংগঠনের পক্ষ থেকে মো: এখলাছ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির অন্তর্বতীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রে কর্পোরেটস একাউন্টসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম,দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ডেসকোর হিসাব বিভাগের বির্তকির্ত ব্যবস্থাপক ‘সকল কাজের কাজীখ্যাত’ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, পাশাপাশি বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

মোহাম্মদ আবু ইউসুফের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই সকল অভিযোগের অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডেসকো বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। হিসাব বিভাগে চাকুরীরত থাকা অবস্থায় ইউসুফ তার স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনের নামে থাকা বিভিন্ন কোম্পানিকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অবৈধ পন্থায় কাজ প্রদানের মাধানে কোটি কোটি টাকা নিজে আত্মসাত করেছেন। ডেসকোতে মোহাম্মদ আবু ইউসুফের নিয়োগের কোন প্রকার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অবৈধ উপায়ে টাকার বিনিময়ে তিনি কোম্পানীতে চাকুরী পান।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্টি সরকারের পলাতক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বর্তমানে চাকুরীচ্যুত সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ডেসকোতে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করে ফেলেছেন। মাসুদ চৌধুরীর দোসর হিসাবে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সাথে মিলেমিশে মোহাম্মদ আবু ইউসুফ তাদের আস্থাশীল হয়ে কাজ করেছেন একদিকে, অন্যদিকে প্রচুর অর্থ নিজের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, মোহাম্মদ আবু ইউসুফ অবৈধ পথে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যোগসাজশ করে কাজ আদায় করেছেন এবং নিজের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তিনি তার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও টাকার বিনিময়ে চাকরি লাভ করেছেন বলেও অভিযোগ। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে নারী সহকর্মীদের সঙ্গে গুরুতর অসাদাচারনেরও অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি তার অধীনস্থ উপ-ব্যবস্থাপক ফাহমিদা বিলকিসের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ও শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এ বিষয়ে ফাহমিদা বিলকিস ডেসকো এমডি ও তৎকালীন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগে প্রকাশ, করোনাকালীন ২০২১-২২ সালে এক পর্যায়ে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেন, যা পরবর্তীতে ওই নারী কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে ডেসকো এমডি ও তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্ত সেসময় তার অতিব ঘনিষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী এবং নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন সাইফুল ইসলাম। এদের সকল অপকর্মের সহযোগী ছিলেন এই ব্যবস্থাপক ইউসুফ। তখনকার সময়ে বিপুল পরিমাণে অর্থের বিনিময়ে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত নারী উপ-ব্যবস্থাপক ফাহমিদা বিলকিসের অভিযোগটি কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই গায়েব করে দেন নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) মাসুদ চৌধুরী। এ নিয়ে ডেসকোর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আজও চরম ক্ষোভ রয়েছে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মোহাম্মদ আবু ইউসুফ তার নেতৃত্বে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম চালিয়েছেন। ২০১৯ সালে ওয়ান ব্যাংকে ২০ কোটি টাকার এফডিআর প্রদান এবং অন্যান্য ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ব্যাংকিং দপ্তর থেকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হলেও, তার চাকুরীচ্যুত হওয়ার কথা ছিলো। এখন তার বিরুদ্ধে সেই ঘটনার তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।

লিখিত দরখাস্তে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, বিগত সরকারের সময় স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মালিকানাধীন ব্যাংকে কম রেটে ব্যবস্থাপক আবু ইউসুফ প্রভাবখাটিয়ে এফডিআর করান। এমনকি তার ইন্ধনেই সে সময় পদ্মা ব্যাংকে ১২০ কোটি টাকার এফডিআর করানো হয়, যা বিগত ৫ আগষ্টের পর থেকে নানান দেনদরবার করেও ডেসকো আর কোনভাবেই ফেরত পাচ্ছে না।

এর পাশাপাশি অভিযোগ, মোহাম্মদ আবু ইউসুফ তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা দেখিয়ে নিজেকে বিএনপির একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে পরিচিতি দেন, যা তার দুর্নীতির টাকা ও ডেসকোতে তার ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগসাজশ করে নিজের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। কখনো বিএনপির সঙ্গে সক্রিয় না থাকলেও ইউসুফ সম্প্রতি প্রচুর টাকার বিনিময়ে জিয়া পরিষদ ডেসকো শাখার যুগ্ম আহবায়ক বনে গেছেন বলেও অভিযোগ। অথচ এই আবু ইউসুফই পতিত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে একটি ম্যাগাজিনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘কীর্তিমান’ শিরোনামে কবিতা লিখেছিলেন। সেই তিনিই এখন আবার রাতরাতি অর্থের বিনিময়ে জিয়া পরিষদের পদ কিনে নেতা সেজেছেন।

ঘটনার প্রেক্ষাপটে অভিযোগকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, এই সমস্ত অভিযোগের তদন্ত না হলে তারা কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবে, যার মধ্যে প্রেসক্লাবের সামনে অনশনও থাকতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ডেসকোর একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী গণমাধ্যমকে বলেন, এই অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুতর এবং এর যথাযথ তদন্ত হওয়া জরুরি। প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও আস্থা রক্ষা করতে দ্রুত তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান শীর্ষ কর্তৃপক্ষ।

 

সর্বশেষ - জেলার খবর