সোমবার , ১০ নভেম্বর ২০২৫ | ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অপরাধচিত্র বিশেষ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খুলনা
  7. খেলাধুলা
  8. চট্রগ্রাম
  9. জাতীয়
  10. জেলার খবর
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. প্রবাসের কথা
  14. বরিশাল
  15. বিনোদন

পদ হারানোর আগেই পদত্যাগ রেড ক্রিসেন্ট চেয়ারম্যান, মন্ত্রণালয়কে দুষলেন

প্রতিবেদক
Newsdesk
নভেম্বর ১০, ২০২৫ ১০:৫৪ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন দফতর, সংস্থায় নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব পালন করে আসছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রিসেন্টেও দায়িত্ব নেন নতুন পরিচালনা পর্ষদ। গত মার্চে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক স্বেচ্ছাচারিতা, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে বোর্ড মিটিং করা, নিয়ম লঙ্ঘন করে উপ-মহাসচিবের মেয়াদ বাড়ানোসহ নানা অভিযোগ উঠতে থাকে। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানসহ চার সদস্য পদত্যাগ করেন। এবার নিজেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম।

মন্ত্রণালয় থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেকটা চূড়ান্ত হওয়ার খবরের মধ্যেই নিজে থেকে পদত্যাগ করলেন চেয়ারম্যান। হঠাৎ কেন নিজে থেকে পদত্যাগ করলেন এ নিয়ে নানা আলোচনা চললেও খোদ চেয়ারম্যানের দাবি, পরিকল্পনা মাফিক কাজ করার সুযোগ দেখছেন না। যে কারণে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অযাচিতভাবে প্রতিনিয়ত হস্তক্ষেপ করার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেলে মগবাজারে রেড ক্রিসেন্টের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ড. আজিজুল ইসলাম পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

প্রশ্ন ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র সংশ্লিষ্ট দফতরে দিয়েছেন কি না- জবাবে তিনি বলেন, আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে পদত্যাগের বিষয়টি জানালাম। এখন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেব। দেখা গেল পদত্যাগপত্র পাঠালাম যেতে কয়েক দিন সময় লাগবে। তার আগে আপনাদের মাধ্যমে জানিয়ে দিলাম।

পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে মেজর জেনারেল (অব.) আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। ইতিমধ্যেই ১০০ কোটি টাকার দেনা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং তা ধারাবাহিকভাবে চলছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ও নানা হস্তক্ষেপের কারণে কার্যক্রম এগোতে পারছিলাম না। এজন্য চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বোর্ড মেম্বার বোর্ড ইয়ার কমোডর (অব.) শাহে আলম, ডা. শেখ জাফর ও অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউসুফ।

এসময় বোর্ডের আরেক সদস্য বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে ডে টু ডে সব কাজে ইন্টারফেয়ার করা হচ্ছে। এভাবে হলে তো স্বস্তিতে কাজ করা সম্ভব না।’

সংস্থাটির কিছু কর্মকর্তার নাম উল্লেখ না করে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এদের কেউ কেউ তাদের বদলি করা হলে, অনৈতিক দাবি করার পর না মানায় অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলছে।’

রেড ক্রিসেন্টের এমন পরিস্থিতির দায় কার- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে আমরা বলতে পারবো না। তবে আপনারা সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। আপনারা অনুসন্ধান করে বের করতে পারবেন।’

যেভাবে রেড ক্রিসেন্টে অস্থিরতা
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারে জর্জরিত। দুর্যোগকালে মানবিক সহায়তার জন্য পরিচিত এই সংস্থাটিতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট নতুন বোর্ড গঠনের পর থেকেই অস্থিরতা দেখা দেয়।

গত বছরের মার্চে আজিজুল ইসলাম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অভিযোগ ওঠে- নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ, নারী নির্যাতনের শাস্তি বাতিল, দুর্নীতিতে জড়িতদের পুনর্বহাল, রাজনৈতিক বিবেচনায় বদলি ও পদোন্নতি এবং স্বেচ্ছাসেবক-অধিকর্তাদের দমনপীড়ন নিয়ে।

পরবর্তী সময়ে গত অক্টোবরে এসব অনিয়মের প্রতিবাদে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকরা টানা এক সপ্তাহ আন্দোলন করেন। আন্দোলন দমন হলেও বোর্ডের অভ্যন্তরে অসন্তোষ আরও বাড়ে। পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যান, কোষাধ্যক্ষসহ একে একে চার সদস্যের পদত্যাগ করায় বোর্ড কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বোর্ডের একের পর এক পদত্যাগ, অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্থবিরতা পর্যবেক্ষণের পর সরকার বর্তমান বোর্ড ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৪ নভেম্বর একজন নারীকে চেয়ারম্যান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট নতুন বোর্ড গঠনের প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সইয়ের পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। একই সঙ্গে রেড ক্রিসেন্টে চলমান অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ যাচাই করতে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত টিম গঠনেরও পরিকল্পনা করে মন্ত্রণালয়ে।

মন্ত্রণালয়ের এমন পরিকল্পনার খবর চাউর হলে পদ রক্ষায় ৫ নভেম্বর অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চান। কিন্তু তাকে সাক্ষাৎ দেওয়া হয়নি। এরমধ্যেই তিনি রোববার (৯ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন।

মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্ত আসার আগা তড়িঘড়ি পদত্যাগ কারণ জানতে চাওয়া সংবাদ সম্মেলনে। জবাবে আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রণালয় কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা আমি জানি না। আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে কাজ করার পরিবেশ নেই। যে কারণে পদত্যাগ করেছি।’

সর্বশেষ - রাজনীতি