গেস্টরুমে যেতে দেরি হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ছয় ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে। তবে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেনের দাবি, মারধর নয়, ওই ছাত্রদের ‘বকাঝকা’ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে মুহসীন হলের ১০২৭ নম্বর কক্ষে ওই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী ছয়জন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের (প্রথম বর্ষ) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী। তাঁরা হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নিয়ন্ত্রিত গণরুমে থাকেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রদের অভিযোগ, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের এইচ আর মারুফ, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের আশরাফুল ইসলাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মো. আরিফ ও আইন বিভাগের নাবিল তাঁদের নির্যাতন করেছেন। তাঁরা সবাই দ্বিতীয় বর্ষে (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) অধ্যয়নরত ও ছাত্রলীগের কর্মী; সংগঠনটির হল শাখার সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী তাঁরা।
ছয় ছাত্রের দুজন এই প্রতিবেদককে বলেন, হলে থাকতে হবে, তাই ভয়ে তাঁরা স্বনামে কিছু বলতে চান না। তাঁরা বলেন, গতকাল রাতে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ থাকায় ছাত্রলীগের নির্ধারণ করে দেওয়া সময়ে তাঁরা গেস্টরুমে উপস্থিত হতে পারেননি। পরে তাঁদের ছয়জনকে আলাদাভাবে গেস্টরুমে (১০২৭ নম্বর কক্ষ) ডাকা হয়। সেখানে তাঁদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। কয়েকজনকে দেওয়া হয় চড়থাপ্পড়, এমনকি লাঠি দিয়েও পেটানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের মধ্যে ১৩টি ছাত্রদের জন্য। ছাত্রদের হলগুলো মূলত ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। হলের কোন কক্ষে কারা থাকবেন, তা ছাত্রলীগের নেতারাই ঠিক করেন। আসন বরাদ্দে প্রশাসনের ভূমিকা সামান্যই। এসব কক্ষে থাকার জন্য ছাত্রলীগের নেতাদের প্রতি আনুগত্য ‘বাধ্যতামূলক’।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কল করা হলে অভিযুক্ত এইচ আর মারুফের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। আশরাফুল ও আরিফ দাবি করেন, নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আর নাবিলকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘ওই ছয়জনকে কোনো মারধর করা হয়নি, বকাঝকা করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে আমি সমাধান করে দিয়েছি।’
এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গত রাতে সাংবাদিকদের মাধ্যমে এ ধরনের একটি অভিযোগের কথা শুনেছি। আজ বুধবার বেলা তিনটা পর্যন্ত আমি হল কার্যালয়ে ছিলাম। কেউ লিখিত বা মৌখিক এমন কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রাধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া তাঁর দায়িত্ব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।