আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) লেবাননে অভিযান শুরুর পর থেকে গত দু’মাসে দেশটিতে নিহত হয়েছে ২ শতাধিক শিশু এবং আহত হয়েছে আরও ১ হাজার ১০০ জন। জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার এ তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেমস বলেন, “দু’মাসে দুই শতাধিক শিশু নিহত হওয়া এবং আরও ১ হাজার ১০০ জনের আহত হওয়া অবশ্যই উদ্বেগজনক, কিন্তু তারচেয়েও উদ্বেগ ও বিরক্তির ব্যাপার হলো— যারা এ সংঘাত বন্ধ করতে পারে, তাদের মধ্যে আমরা এক ধরনের জড়তাবোধ দেখতে পাচ্ছি। শিগগিরই লেবাননে সংঘাত বন্ধ হবে— এমন কোনো ইঙ্গিত বা আভাস আমরা এখনও পাই নি।”
এসব ঘটনার জন্য কারা দায়ী— এ প্রশ্নটি জেমসকে সংবাদ সম্মেলনে করেছিলেন একজন সাংবাদিক, কিন্তু ইউনিসেফের মুখপাত্র তা এড়িয়ে গেছেন।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের অপর পারে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। এই দক্ষিণাঞ্চলেই বিশ্বের বৃহত্তম সশস্ত্র ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান ঘাঁটি। গোষ্ঠীটির অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনার অবস্থান এখানে। ইরানের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও মদতে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হিজবুল্লাহ জন্মলগ্ন থেকেই ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত দশকগুলোতে সীমান্ত অঞ্চলে ইসরায়েলের সঙ্গে বিভিন্ন সংঘাতে জড়িয়েছে হিজবুল্লাহ, তবে উভয়পক্ষের সংঘাত গুরুতর রূপ নিয়েছে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর।
গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ। পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে ইসরায়েলও।
প্রায় এক বছর ধরে সীমান্তে সংঘাত চলার পর গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। সেই অভিযান শুরুর ১০ দিনের মধ্যে নিহত হন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা ও সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েক জন শীর্ষ কমান্ডার। এতে গোষ্ঠীটির চেইন অব কমান্ডের সর্বোচ্চ স্তর প্রায় ভেঙে পড়ে।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত লেবাননে মোট নিহত হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন ১২ লাখেরও বেশি মানুষ।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের মুখপাত্র বলেন, “অনেক সময় এমন হয় যে সহ্যের অতীত কোনো বিষয়ও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সহ্য করতে শিখে যায়। গাজার ক্ষেত্রে এমন ঘটছে, লেবাননেও শুরু হয়েছে।”
সূত্র: রয়টার্স