আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
জাপানের পশ্চিম উপকূলে গত সোমবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৩ জনে দাঁড়িয়েছে। তারা সবাই হানসু দ্বীপের ইশিকাওয়া অঞ্চলের বাসিন্দা। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা এখনো ধসে পড়া বিভিন্ন ভবনের নিচে আটকা পড়ে আছেন অনেকে।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, সোমবারের ৭ দশমিক ৬ মাত্রার প্রথম ভূমিকম্পের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ৫০০ কম্পন অনুভূত হয়েছে। ইশিকাওয়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অঞ্চলে গতকাল দিনভর ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের খোঁজে অনুসন্ধান চালান উদ্ধারকর্মীরা। তবে ভেঙে পড়া সড়ক, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো ও দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোর অবস্থান প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় সামগ্রিক উদ্ধার তৎপরতা জটিল হয়ে পড়েছে।
উপদ্রুত এলাকাগুলো থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রাতভর তীব্র শীতের মধ্যে পার করতে হয়। এর মধ্যেই গতকাল ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে ভূমিধসের আতঙ্ক দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটলে উদ্ধার তৎপরতা আরো কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
ওয়াজিমা শহরে বৃষ্টি ও আফটারশকের মধ্যেই ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সাততলা একটি ভবনে আটকে পড়া এক নারীকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাতে দেখা যায় উদ্ধারকর্মীদের। দমকলকর্মীরা জানিয়েছেন, তারা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ওই নারীর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ওই নারীর কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। বিদ্যমান নানা সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে অবিলম্বে দুর্গত অঞ্চলের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভূমিকম্পের ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এটি সময়ের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ এবং আমার বিশ্বাস, এখন সেই যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।’ ত্রাণ বিতরণে সমুদ্রপথও ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, অধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় বেশকিছু বড় ট্রাক প্রবেশ করতে পেরেছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মেয়ররা গতকাল আঞ্চলিক এক জরুরি সভায় মিলিত হন। তারা অবিলম্বে আক্রান্ত সড়কগুলো সারাতে সরকারের প্রতি দাবি জানান। ত্রাণ সহায়তার আহ্বান জানিয়ে ওয়াজিমা শহরের মেয়র শিগেরু সাকাগুচি বলেন, সরকারের প্রচেষ্টার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। কিন্তু খাদ্য সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এছাড়া অনেকে তীব্র শীতের মধ্যে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি অবস্থিত উপকূলীয় সুজু শহরের মেয়র মাসুহিরো ইজুমিয়া জানান, সেখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড।