আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মস্কোতে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সংলাপে ‘‘কৌশলগত অংশীদারিত্বের’’ ওপর নিজেদের প্রতিশ্রুতিতে জোর দিয়েছে রাশিয়া ও ভারত। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার মস্কোতে ওই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের বরাত দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলেছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নয়াদিল্লি সফরের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগুর সঙ্গে দোভালের ওই বৈঠকে দুই পক্ষই পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ভারতীয় পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত আগামী ২৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ বেড়ে ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন এই শুল্ককে গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের সম্পর্কে সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই শুল্কের কারণে ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মস্কোতে দোভালকে উদ্দেশ করে টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে শোইগু বলেন, ‘‘আমরা একটি নতুন, অধিক ন্যায্য ও টেকসই বিশ্বব্যবস্থা গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক আইনের শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিতে এবং আধুনিক চ্যালেঞ্জ ও হুমকি মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ।’’
জবাবে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বলেন, ‘‘বর্তমানে আমরা অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক স্থাপন করেছি। যে সম্পর্ককে আমরা অত্যন্ত মূল্য দিই এবং আমাদের দুই দেশের মাঝে কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে।’’
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা হয়ে উঠেছে ভারত এবং চীন। তখন থেকেই রাশিয়ার অর্থনীতিকে চাপে ফেলার কৌশল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ।
ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের মাধ্যমে মোট শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত করার আগে থেকেই রুশ তেল ক্রয় করা দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার ক্রেমলিন অভিযোগ করে বলেছে, ভারতের ওপর অবৈধ বাণিজ্যিক চাপ তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র। নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়িয়ে ক্রেমলিন বলেছে, স্বাধীনভাবে যেকোনও দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করার অধিকার রাখে ভারত।
ভারতের তেল শিল্প খাতের একাধিক সূত্র বলেছে, মার্কিন হুমকি ও রাশিয়ার তেলের ছাড় কমে যাওয়ায় ভারতের রাষ্ট্রীয় পরিশোধনাগার কোম্পানিগুলো রুশ তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বেসরকারি মালিকানাধীন পরিশোধনাগার রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও নায়ারা এখনও ভারতের শীর্ষ রুশ তেল ক্রেতা হিসেবে রয়েছে।
দেশটির সরকারি এক কর্মকর্তা বলেছেন, দোভালের মস্কো সফরে রুশ তেল কেনার বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
ভারত ২০১৮ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করে। এই চুক্তির আওতায় রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচটি এস-৪০০ দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার কথা রয়েছে ভারতের। নয়াদিল্লি বলছে, চীনের হুমকি মোকাবিলার জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা প্রয়োজন।
তবে রুশ এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার সরবরাহ একাধিকবার বিলম্বিত হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে শেষ দুটি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ২০২৬ ও ২০২৭ সালে সরবরাহ করা হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ঐতিহ্যগতভাবে ভারত অস্ত্র আমদানিতে রাশিয়ার ওপর নির্ভর করলেও গত কয়েক বছরে তা ব্যাপকভাবে কমিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে ঝুঁকেছে।
সূত্র: রয়টার্স।