শনিবার , ২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অপরাধচিত্র বিশেষ
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলাধুলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জাতীয়
  9. জেলার খবর
  10. ঢাকা
  11. তথ্য-প্রযুক্তি
  12. প্রবাসের কথা
  13. বরিশাল
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁ : অভিনব কায়দায় চলছে অবৈধ মাদক ব্যবসা

প্রতিবেদক
Newsdesk
নভেম্বর ২, ২০২৪ ৯:১০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজধানী কাকরাইলে রাজমনি ঈশা খাঁ বারে অভিনব কায়দায় চলছে অবৈধ মাদক ব্যবসা। আভিজাত্যের আড়ালে মাদক থেকে নারী ব্যবসায় লিপ্ত এই হোটেলটি । আওয়ামী সরকারের দীর্ঘদিন রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে দাপটের সঙ্গে তারা চালিয়েছে অবৈধ এই ব্যবসা। দেশের রাজনৈতিক পেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও রাজমনি ঈশা খাঁ রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। প্রতিষ্ঠানের মালিক আওয়ামী নেতা হওয়ায় পলাতক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই হোটেলটিকে ব্যাবহার করছেন আস্তানা হিসাবে । আবাসিক রুমে ঘাঁটি গেড়ে চালিয়ে যাচ্ছেন অনৈতিক কর্মকান্ড।

এখানে আসার পারমিট নেই তাদের কাছেও চলছে মদ বিক্রি। বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গড়ে ওঠা মিনিবারে মদ-বিয়ার সাপ্লাই দিয়ে আসছে হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁ কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও এখানে চলে সিসা বার । সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত ৪ টা পর্যন্ত উঠতি বয়সীদের বড় একটা অংশ নেশায় বুঁদ হয়ে থাকছে। মাঝেমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অভিযান চালালেও এর দৃশ্যমান কোনো প্রভাব পড়ছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ‘ইশারায়’ এই মাদকের রমরমা বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এখানে কোটি কোটি টাকার অবৈধ মাদকও বিক্রি হচ্ছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আসক্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

মাদকের সঙ্গে এক শ্রেণীর নারীর হাতছানিতে প্রলুব্ধ হয়ে সেখানে ছুটছে কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত । রুম ভাড়া নিলেই মিলছে মদ-নারী । ফলে এই হেটেলে ব্যবস্থায় কখনো ভাটা পরে না । তারা মদ ও নারী সরবরাহের মাধ্যমে এক শ্রেণীর হোমরা-চোমরা লালন করে থাকে, ফলে তাদের বিরুদ্ধে টু- শব্দটি করার উপায় নেই কারও ।
গত কয়েক দিনে এই বারে গিয়ে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের বিদেশি মদের পাশাপাশি সিসা সেবনের দৃশ্য চোখে পড়েছে এই প্রতিবেদকের।

আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়: বারের অধিকাংশ ক্রেতা ও শ্রোতা আওয়ামীলীগের নেতা- কর্মী, মোট কথা আওয়ামী লীগের নেতাদের অভয়ারণ্য পরিনত হয়েছে বারটি।

অনুসন্ধানে জানাযায়, হোটেল এবং বারটির খোদ মালিক আহসান উল্ল্যাহ মনির বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি। তিনি বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের অনেক বড় ডোনার। এই বার এর আগে বসতো ক্যাসিনো সম্রাট, শাওন, আরমানদের মেলা। এটি বিশ্বস্ত সুত্রে জানাযায়, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, সাবেক সাধারন সম্পাদক জাকির, মহানগরের বায়োজিদ, সহ অনেক পলাতক আওয়ামী লীগের নেতারা এখনো আত্নগোপনে আছে হোটেল রাজমনিতে। তারা রাত্রি বেলা বারে বসে নিয়মিত সরকার বিরোধী বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। আহসান উল্ল্যাহ মনির পলাতক নেতাদের এই বলে তার হোটেলে রেখেছে যে তার ছেলের বউ নাকি সাইদ ইস্কান্দারের মেয়ে, তাই তার হোটেলে কোন পুলিশি রেড পরবে না।

বারে চলে মুজিব বন্দনা : এখানে রাত ৮টায় বাজলেই চলে মুজিব বন্দনায় গানের আসর। অথচ তাদের লাইসেন্স সূত্রে থেকে জানা যায় বারে কোনো গান গাওয়ার অনুমতি নেই। তবুও অবৈধভাবে অ্যারেঞ্জার আজিজ নিজেই নিয়মিত গেয়ে চলে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, কিংবা ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ হাসিনা মুজিব বন্দনার নানা গান। অভিযোগ রয়েছে, বারের লাইসেন্সে আড়ালে মদ বিক্রি নয় আওয়ামী বন্দনার হিড়িক ওঠে রাত ৮ টা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত। চলে অশ্লীল নাচ-গান। ওড়ানো হয় লাখ লাখ টাকা।


বারে হয় সিঙ্গারদের টাকা চুরি : বারের ষ্টাফ সেনুর নেতৃত্বে নিয়মিত চুরি সিঙ্গারদের টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৪/৫ জন সিঙ্গার বলেন, ৫০০ টাকা টিপস দিলে আমরা পাই ২০০ টাকা । কারন ৫০% বারের মালিক নেয়, বাকি ১০% মিউজিসিয়ান খরচ বা জমা বাবদ কেটে রাখে, তার মাঝে যেদিন সেনুর ডিউটি পরে সেদিন টাকা নিয়ে আর বাসায় যাইতে পারি না। কারণ প্রত্যেকে যে টাকা টিপস পাই না কেনো, সেনু মিনিমাম ১০০০-২০০০ চুরি করবেই।

জমজমাট নগদ টাকার ব্যবসা : টিপসের ক্ষেত্রে বেশীর ভাগ কাষ্টমার ভাংতি নগদ টাকা ব্যবহার করে, তার জন্য এরা ১০ হাজার টাকার বান্ডিলে ৫০০ টাকা করে কেটে নেয়, যা মতিঝিলে ২০০ টাকা হইলেই পাওয়া যায়। এই বিজনেস থেকে এই জায়গার ষ্টাফরা দৈনিক ১০-১২ হাজার টাকা ইনকাম করে।

নেই বৈধ লাইসেন্স : এখানে কেরু এন্ড কোং ছাড়া অন্য কোন কোম্পানির মদ বিক্রি করার পারমিশন নেই, তবে তারা নিয়মিত ব্ল্যাক থেকে মাল কিনে, বিক্রি করে সব ধরনের মদ। এমনকি সীসাও বিক্রি করে তারা। বিগত আওয়ামী সরকারের ডোনার হিসেবে তারা কখনোই নিযমিত রেষ্টুরেন্ট ও বারের ভ্যাট দেয় নাই বলে জানা গেছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, হেটেল রাজমনি ঈশা খাঁ বার গ্রাহকদের কাছে ভ্যাট নিচ্ছে। কিন্তু সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে না। শিগ্রই অভিযান চালানো হবে বলেও জানা যায়।

এ বিষয়ে রাজমনি ঈশা খাঁ বারের ম্যানেজার আহসান উল্লাহ মনিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি ।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, আমি এখানে নতুন এসেছি। এ বিষয়ে আমার জানা নেই । তবে তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা মিললে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা), অ্যাডিশনাল ডিআইজি তানভীর মমতাজ জানান, বারের অনিয়ম রুখতে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অভিযান চলছে । শিঘ্রই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হেটেল রাজমনি ঈশা খাঁ বার অভিযান চালানো হবে।

সর্বশেষ - জাতীয়