নিজস্ব প্রতিবেদক :
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। রোববার (২ জুন) বিকেলে ৭ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এবং দেশের ৫৪তম বাজেট এটি।
প্রস্তাবিত এই বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা, জনপ্রসাশনে বরাদ্দ ১ লাখ ২১ হাজার ৬৬০ কোটি। এছাড়াও প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ ৪১ হাজার ৮০ কোটি টাকা, কৃষিতে বরাদ্দ ৪৬ হাজার ৬১০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণে বরাদ্দ ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা।
বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২২ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই তুলনায় এবার বাজেটের আকার ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
এবার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জোগান দেবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বা মোট লক্ষ্যমাত্রার ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ৩ দশমিক ৬২ ভাগ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে আসবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বা মোট ঘাটতির ৫৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বিদেশি ঋণ থেকে আসবে ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বা ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
বাজেটে পরিচালন ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এবার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর ৫৭ ভাগই যাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধে। নতুন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১০ থেকে ২০ ভাগ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে।
এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর কমতে পারে ২ দশমিক ৫ ভাগ। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের কর নামবে ২০ শতাংশে। তবে অপরিবর্তিত থাকছে পুঁজিবাজারের বাইরের প্রতিষ্ঠানের করহার। এসব প্রতিষ্ঠানকে আগের মতোই ২৭ দশমিক ৫ ভাগ কর দিতে হবে। এছাড়া পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউজের সিকিউরিটিজ লেনদেন কর শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ থেকে কমে হচ্ছে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে হচ্ছে ২৭ দশমিক ৫।
বাজেট উপস্থাপন বক্ততৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুতের মূল্য আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতি আগামী মাসে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। চলতি বছর অতিরিক্ত ৬৪৮ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রেডে যুক্ত হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।