নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং বৃষ্টির প্রভাবে মাছ ও সবজির যোগান কম থাকায় বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ জন্য দামও বেশ চড়া বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে আরও অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। শাক-সবজি, মাছ-মাংস, ডিমসহ বেড়ে গেছে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম।
বিক্রেতাদের দাবি, বছরের এই সময়ে সবচেয়ে বেশি মাছের যোগান থাকে। কিন্তু এ বছর ভিন্ন চিত্র। নদ-নদী কিংবা সাগরে মাছের আহরণ কমেছে। তাই বাজারে যোগান কম। আর সে কারণেই দাম কমছে না।
চাষের তেলাপিয়া আর পাঙ্গাস ছাড়া ৪০০ টাকা কেজির নিচে কোন মাছ নেই। আর নদ-নদীর সুস্বাদু মাছের দাম ৬শ’ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত।
এদিকে বাজারে ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৬০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৮০০ টাকা ও দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩২০০ টাকায়।
এছাড়া প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকায়, কাতল ৪৫০ টাকা, কৈ ২০০-২২০ এবং পাবদা ও শিং বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। আর চাষের ট্যাংরা প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও মলা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহ ব্যবধানে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে অন্তত ১০-২০ টাকা পর্যন্ত। আরও এক দফা দাম বেড়েছে কাঁচামরিচ, বেগুন, করলাসহ বেশ কিছু সবজির। বাজারে প্রতিকেজি ঢ্যাঁড়শ ৭০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, গোল বেগুন ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, গাজর ৬০-১০০ টাকা ও কহি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া করলা ৮০ টাকা, টমেটো ১৫০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০-৮০ টাকা ও শসা ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। আর লাউ প্রতি পিস ৬০-৭০ টাকা ও চালকুমড়া প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
করলা, শসাও কিনতে হবে ১০০ টাকায়। প্রতিকেজি কাঁচামরিচের দর হাঁকা হচ্ছে ২৪০ টাকা।
সবজির পাশাপাশি দাম বেড়েছে সব ধরনের শাকেরও। প্রতি মুঠো লাউ শাক বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা ও পুঁইশাক ৩০-৪০ টাকায়। আর প্রতি আটি ডাঁটাশাক ৩০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, লালশাক ২০-৩০ টাকা ও পাটশাক ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমা থাকায় প্রায় সব ধরনের শাক-সবজির দাম বেড়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতারা জানান, কোনো কোনো সবজিতে প্রায় ২০ টাকা পর্যন্তও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পটোলের দাম। তবে তুলনামূলক কম রয়েছে পেঁপে।
আরও বলেন, এবার দেশের অনেক এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। ফলে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক-সবজি আসতে পারছে না। যার কারণে বেড়েই চলেছে দাম। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে মরিচ ও ধনেপাতার।
এদিকে স্বস্তি নেই পেয়াজের বাজারেও। সরবরাহের ঘাটতি না থাকলেও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এক কেজির জন্য গুণতে হবে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
দাম বেড়েছে মুরগিরও। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়; আর প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি দেশি মুরগি ৬০০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩১০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দাম বাড়ছে। মুরগি বিক্রেতাদের দাবি, ‘গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে খামার থেকে পর্যাপ্ত মুরগি আসছে না। তাই সরবরাহ কমে গেছে, আর দাম বেড়ে গেছে।’
এছাড়াও বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৫-১৫০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে হঠাৎ করে বেড়েছে ডিমের চাহিদা। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি সরবরাহ; যা বাড়িয়ে দিচ্ছে ডিমের দাম।
তবে গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন পরিবর্তন নেই। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায়।