নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার টোপ দিয়ে বিদেশ পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান লায়ন বাশার ওরফে খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে অন্তত শ’খানেক মামলা হয়েছে। এ নিয়ে আদালতে বিচারকের উপর্যুপরি প্রশ্নের মুখে পড়েছেন তিনি।
সোমবার (১৪ জুন) মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে বাশারকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। মঙ্গলবার (১৫ দুপুরে আদালতে তোলা হলে এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিচারক তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ প্রহরায় বাশারকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। এসময় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতকড়া পরিহিত ছিলেন তিনি। আদালতে নিলে উত্তেজিত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তাকে কিল-ঘুষি, লাথি ও ডিম নিক্ষেপ করেন।
কাঠগড়ায় আসার পর বাশারের হেলমেট খুলে দেওয়া হয়। তখন কালো মাস্ক খুলে হাসতে থাকেন তিনি। এরপর তার উপস্থিতিতে মানি লন্ডারিং মামলার শুনানি শুরু হয়।
শুনানির এক পর্যায়ে বিচারক বাশারকে প্রশ্ন করেন, ‘এই কাজগুলো কেন করলেন?’ তখন তিনি নিশ্চুপ ছিলেন। ফের বিচারক বলেন, ‘কোন কারণে তাদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হন? তাহলে কেন টাকা ফেরত দেননি?’ তখনও তিনি কোন কিছুর উত্তর দেননি।
এরপর বিচারক বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে কতটা মামলা হয়েছে জানেন?’ বাশার তখন বলেন, ‘আনুমানিক ৭০টা হয়েছে।’ তখন বিচারক বলেন, ‘যত মামলা হয়েছে, মোকাবিলা করতে গেলে তো সারাজীবন কারাগারে কেটে যাবে।’
এরপর বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার মানবিক সত্তা জাগ্রত হয়নি? কয়টা বিয়ে করেছেন?’ উত্তরে বাশার জানান, ‘দুইটা।’ তখন বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘আপনার সন্তান কয়জন?’ বাশারের জবাব, ‘ছয়জন।’
তখন বিচারক বলেন, ‘টাকা নিয়ে এত শিক্ষার্থীর জীবন কেন হুমকির মুখে ফেলে দিলেন? একবারও কি আপনার সন্তানদের কথা মনে পড়েনি?’ এর কোনো জবাব দেননি বাশার।
এদিন রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড শুনানি করেন মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন ও কাইয়ুম ইসলাম নয়ন। অন্যদিকে রিমান্ডে বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন বাশারের আইনজীবী কাজী আনিসুর রহমান ও মারুফা আক্তার। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বাশার যে মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি বাশার, তার স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশার চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ১৪১ শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তারা ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ ঘটনায় গত ৪ মে সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন।
সিআইডি জানিয়েছে, খায়রুল বাশার ও তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতেন এবং সেখান থেকে অর্থ উত্তোলন করে স্থাবর সম্পদ ক্রয়, ব্যবসা পরিচালনা ও অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করেছেন।
এসব ঘটনায় রাজধানীর গুলশান থানা এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে বাশারের বিরুদ্ধে অন্তত ১০০ ব্যক্তির মামলার তথ্য জানা গেছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব মামলা হয়। এসব মামলায় বাশারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাশারের বিরুদ্ধে গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে একের পর এক মামলা হচ্ছে। অনেক মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে।’