নিজস্ব প্রতিবেদক :
ধানমন্ডি ৩২ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর অভ্যুত্থানের সময়কার হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে জামিন দিয়েছে আদালত।
ঢাকার মহানগর হাকিম এম এ আজহারুল ইসলাম রোববার শুনানি শেষে এক বছর আগের ওই মামলা থেকে আজিজুর রহমানের জামিন মঞ্জুর করেন বলে তার আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী জানান।
তিনি বলেন, “আশা করছি সব প্রক্রিয়া সেরে কালকের মধ্যেই তিনি মুক্তি পাবেন।”
আজিজুরকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হয়। এমন প্রেক্ষাপটে জামিন পেলেন আজিজুর।
এদিন সকালে ১০ মাসের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে আদালতে আসেন আজিজুর স্ত্রী চুমকি খাতুন। শুনানির সময় তিনি আদালতে বসে ছিলেন।
পরে চুমকি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার স্বামী রাজনীতির সাথে জড়িত না। আবেগের বশে সেখানে গিয়েছিলেন। জামিন পেয়েছেন, আমি খুশি।”
আজিজুরের আইনজীবী রাখী জামিন শুনানিতে বলেন, “আসামি একজন রিকশাচালক। ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধরের শিকার হন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পূর্বের একটা পেন্ডিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজিজুর দিন আনে, দিন খায়। তার রিকশাটাও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।”
শুনানি শেষে বিচারক এক হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তার জামিনের মঞ্জুর করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ৫০তম বার্ষিকীতে শুক্রবার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে তার বাড়ির সামনে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধর ও হেনস্তার শিকার হন কয়েকজন।
তাদের মধ্যে রিকশাচালক আজিজুর রহমান বেলা ১১টার দিকে রিকশা চালিয়ে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ৩২ নম্বরে যান। ফুলের তোড়ার ওপর কাগজে লেখা ছিল ‘১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস’।
তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিকর্মীরা রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েন। একজন লাফ দিয়ে গিয়ে তার হাত থেকে ফুলের তোড়াটি কেড়ে নেন। চলে মারধর, ভাঙচুর করা হয় তার রিকশাটিও। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই রিকশাচালক।
আজিজুর রহমান সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন। চারশ টাকা দিয়ে ফুলের তোড়াটি কিনেছেন।
“আমার অনেক কষ্টের টাকা, আমি দুই বছর ঢাকা শহরে রিকশা চালাই। শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি জন্যি এহানে আইছি।”
পরে আজিজুর রহমানকে পুলিশ আটক করে এবং এক বছর আগের একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার আদালতে তোলে। ওই মামলায় তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন ধানমন্ডি থানার এসআই মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান।
গত ২ এপ্রিল ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা এ মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডি থানাধীন নিউ মার্কেট থেকে সাইন্সল্যাব এলাকার মিছিলের সঙ্গে যাচ্ছিলেন মো. আরিফুল ইসলাম।
ঘটনার দিন দুপুর ২টার দিকে আসামিরা গুলি, পেট্রোল বোমা ও হাতবোমা নিক্ষেপ করে। তাতে আরিফুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ২ মাস চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হন।
শনিবার আজিজুরের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী। শুনানি শেষে বিচারক আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
তার পরদিনই অন্য আদালতে শুনানি শেষে আজিজুরের জামিন মঞ্জুর হল।